লাল কাকড়া দেশ সোনাদিয়া ট্রীপের গল্প

অনেক দিন ধরে স্বপ্ন দেখছিলাম কুতুবদিয়া এবং সোনাদিয়া যাওয়ার, অফিসের চাপ এবং সব মিলিয়ে সময় করে উঠতে পারছিলাম না । এইবার ইদে মিল্লাদুন্নবী এবং শুক্র-শনি-রবি সহ তিন দিনের একটা লম্বা বন্ধ পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।

এইবার আসি মূল গল্পে, ৮ তারিখ শুক্রবার সকাল ৬ টায় চলে গেলাম চিটাগং এর শাহ আমানত সেতুতে/তৃতীয় কর্নফুলী সেতু ওইখান থেকে মগনামা ঘাটের ডাইরেক্ট সিএনজি এবং বাস পাওয়া যায় সিএনজি প্রতিজন ১৮০ টাকা এবং বাস প্রতিজন ১৫০ টাকা । ঢাকা থেকে আসলে প্রথমে চিটাগং এর গরিবুল্লাহ্ শাহ/জিইসি মোড়/চিটাগং রেলওয়ে স্টেশন নেমে সিএনজিকে নতুন ব্রীজ বললে নিয়ে যাবে শার্হ আমানত সেতুতে। ২ ঘন্টার মতো জার্নি করার পর পৌছে গেলাম মগনামা ঘাটে। মগনামা ঘাট থেকে লাইফ বোট/লাল বোট গুলো ছেড়ে যায় কিছুক্ষণ পর পর, কিছু বোট যায় মালেক শাহ্ দরবার ঘাটে আর কিছু যায় কুতুবদিয়া বড়গোপ ঘাটে । বড়গোপ যাওয়ার বোটে চেপে বসলাম ১৫/২০ মিনিটের জার্নি করেই পৌছে গেলাম কুতুবদিয়া বড়গোপ ঘাটে। প্রতি ঘাটে ৩ টাকা করে ঘাট ভাড়া, আর বোট ভাড়া নিবে প্রতিজন ২০ টাকা করে। বড়গোপ ঘাট থেকে ডাইরেক্ট টমটম বা মাহিন্দ্রা পাওয়া যায় ওটাতে করে বড়গোপ বাজারে চলে গেলাম প্রতিজন ১৫ টাকা । দুপুরের খাবার দাবার সারলাম স্থানীয় এক হোটেলে সাগরের বিভিন্ন লোকাল মাছ দিয়ে। খাওয়া দাওয়া বা গাড়ি ঠিক করার সময় অবশ্যই দরদাম করে নিবেন, তাহলে ঝামেলায় পড়ার সুযোগ কম থাকবে। ভরপেট খাওয়া দাওয়া সেরে বেড়িয়ে পরলাম কুতুবদিয়া বাতিঘর এবং উইন্ডমিল দেখার জন্য । বড়গোপ বাজার থেকে মাহিন্দ্রা/টেম্পু/জীপ রির্জাভ করতে হবে, কারন ওইন্ডমিল এবং বাতিঘরের ওই দিকে লোকাল কোন টমটম বা মাহিন্দ্রা যায় না, আমার প্ল্যানিং ছিলো উইন্ডমিল এর ওখানে ক্যাম্পিং করার, তাই আমরা প্রথমে বাতিঘর দেখেবো আর পরে উইন্ডমিল এর ওখানে গিয়ে নেমে যাবো, এমন শর্তে একটা লম্বা টেম্পু রির্জাভ করলাম ১২০০ টাকা দিয়ে । বাতিঘরের ওখানে ১ ঘন্টার মতো ঘুরাঘুরি করে চলে গেলাম উইন্ডমিল আমাদের কাঙ্খিত ক্যাম্পিং স্পটে, ঘূর্নিঝড় বুলবুল এর কারণে সন্ধ্যার পর থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এবং সমুদ্রে পানি বেশি থাকায় সাগরের পাড়ে ক্যাম্পিং করা হয়নি, তবে উইন্ডমিল এর জিনিসপত্র রাখার জন্য এবং তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রমের জন্য একটি দোতালা ভবন রয়েছে ওই ভবনের একটি ফ্লোরে টেন্ট পিচ করে ছিলাম,উইন্ডমিল এর নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন ওনারা অসাধারণ মনের মানুষ ছিলেন, এবং আমরা রাতে ওনাদের টিউবওয়েল এবং বাথরুম ইউস করেছি । কাসেম ভাই, মোবাইল নং ০১৮২৭-৭১৯৯৭৯ ওনার যোগাযোগ করে যেতে পারেন যদি কেউ যান, ওনি ওখানের কেয়ার টেকার।
৯ তারিখ সকাল
আজকে আমারদের গন্তব্য মহেশখালী-ঘটিভাঙ্গা হয়ে সোনাদিয়া। ৮ টার মধ্যে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম আলি আকবর ডেইল ঘাটের উদ্দ্যেশে। বড়গোপ ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সার্ভিস বোট টি মহেশখালী হয়ে কক্সবাজার যায়। ৯.২০ মিনিটে আলি আকবর ডেইল এ ঘাটে ভিড়ে এবং ১৫/২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করে। উইন্ড মিল থেকে আলি আকবর ডেইল ঘাট পর্যন্ত লোকাল টেম্পু পাওয়া যায় প্রতিজন ভাড়া ১০ টাকা করে। ডেইল ঘাট বাজার থেকে সকালের নাস্তা সেরে বোটে চেপে বসলাম, মহেশখালী নদীর দুপাশের সৌন্দয্য দেখতে দেখতে ৪ ঘন্টা রোমাঞ্চকর এক জার্নি শেষে পৌছে গেলাম মহেষখালী। ডেইল ঘাট থেকে মহেশখালী পর্যন্ত বোট ভাড়া প্রতিজন-১০০ টাকা এবং ঘাট ভাড়া ৫ টাকা। মহেলখালি পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ১.৩০ হয়ে যায়, মগনামা ঘাট থেকে টমটম নিয়ে চলে যাই গুরুকগাট্টা বাজারে। ঘাট থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা টমটম ভাড়া। আলামিন হোটেল এ বিভিন্ন আইটেই এর সামুদ্রিক মাছ এবং ভর্তা দিয়ে ভুরিভোজ সেরে গুরুকগাট্টা বাজার থেকে একটি রির্জাভ টমটম (১৫০ টাকা ভাড়া) নিয়ে চলে যাই ঘটিভাঙ্গা বাজার এ। ঘটিভাঙ্গা থেকে জোয়ার এর সময় লালবোট ছেড়ে যায় সোনাদিয়ার উদ্দেশ্য, আপনি যদি ট্রেকিং করতে পছন্দ করনে তাহলে বোটে করে না গিয়ে হেটে ও চলে যেতে পারবেন সোনাদিয়া ১ ঘন্টার মতো ট্রেকিং করলেই পৌছে যাবেন সোনাদিয়া বর্ষার সময় কাদা থাকে তাই শীতকালে যাওয়া ভালো। বোটভাড়া প্রতিজন ৩০ টাকা করে। ট্রীপম্যাট যদি বেশি তাহলে বোট রির্জাভ করার ও সুযোগ রয়েছে। ৮০০/৯০০ টাকা নিবে আসা যাওয়া। বোট ছাড়ার কিছুক্ষন পর অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম, দুপাশের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট মাঝখানে বয়ে চলা নদী এবং মাছ ধরার নৌকা এককথায় মনমুগ্ধকর, যা আপনার মন ছুয়ে যেতে বাধ্য। ২০/২৫ মিনিট বোট জার্নি করার পর আমরা পৌছে গেলাম সোনদিয়ার পশ্চিম পাড়াতে। সোনদিয়া পুরো দ্বীপে মোট দুটি পাড়া রয়েছে একটি পূর্ব পাড়া এবং অন্যটি পশ্চিম পাড়া। টিওবির পোস্ট দেখে একজন গাইড এর নাম্বার সংগ্রহ করে রেখেছিলাম গাইড এর নাম (আলমগীর ভাই মোবাইল নং- ০১৮১৮ ৮৫৭৯৫১) অসাধারন মানুষ সারাক্ষণ ঠোটের কোণে হাসি লেগে থাকে মানুষটার। আলমগীর ভাই মহেশখালী এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সকাল থেকে, এবং মহেশখালী থেকে হরেকরকমের মাছ কিনে নিয়ে যান এবং সেগুলো দিয়ে রাতের খাবার সেরে আমরা চলে গেলাম সোনাদিয়া বীচ এর পাড়ে আলমগীর ভাইয়ের করা ছোট একটা ঘরে একদম বীচের সাথে লাগানো এই ঘরে অসাধারন একটি কাটালাম। ঘূণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে ক্যাম্পিং করা হয়নি। সকাল বেলা একদম ভোর বেলা উঠে বীচের হাজার হাজার লাল কাকড়ার ভিড়ে যেনো বীচে পা ফেলা দায়। কাকড়া গুলোর মাথার উপর দুটো শিং এন্টেনার মতো কাজ করে বিপদের আভাস পেলেই গর্তে ঢুকে যায় । বহুকষ্টে কয়েকটা ছবি এবং ভিডিও করতে সক্ষম হলাম। ১ ঘন্টার মতো বীচ এ ঘুরাঘুরি করে ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে এবং নাস্তা করে ৯ টার বোট ধরলাম জোয়ার চলে গেলে আবার বিপত্তি তাই আর দেরী না করে বোটে করে চলে আসলাম ঘটিভাঙ্গায়। ঘটিভাঙ্গা বাজার থেকে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির এবং স্বর্ণমন্দির এবং চ্যালিয়াতলী বাজার যাওয়ার জন্য ৯০০ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি রির্জাভ করলাম, পূর্ণিমার কারণে র্স্বণমন্দিরে ঢুকতে পারিনি তাই আদিনাথ মন্দির এবং পাশে সেলফি ব্রীজ দেখে চ্যালিয়াতলি বাজার/জনতা বাজার চলে এলাম। চ্যালিয়াতলী বাজার থেকে ডাইরেক্ট চকরিয়ার সিএনজি পাওয়া প্রতিজন ৫০ টাকা করে। চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা এবং চিটাগং এবং কক্সবাজার সবদিকের প্রায় সব কোম্পানির ই বাস পাবেন। আমরা চিটাগং বাস ধরে চিটাগং চলে এলাম যারা ঢাকা যাবেন তারা সরাসরি ঢাকা চলে যেতে পারবেন।
৯ তারিখ সকাল
আজকে আমারদের গন্তব্য মহেশখালী-ঘটিভাঙ্গা হয়ে সোনাদিয়া। ৮ টার মধ্যে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম আলি আকবর ডেইল ঘাটের উদ্দ্যেশে। বড়গোপ ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সার্ভিস বোট টি মহেশখালী হয়ে কক্সবাজার যায়। ৯.২০ মিনিটে আলি আকবর ডেইল এ ঘাটে ভিড়ে এবং ১৫/২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করে। উইন্ড মিল থেকে আলি আকবর ডেইল ঘাট পর্যন্ত লোকাল টেম্পু পাওয়া যায় প্রতিজন ভাড়া ১০ টাকা করে। ডেইল ঘাট বাজার থেকে সকালের নাস্তা সেরে বোটে চেপে বসলাম, মহেশখালী নদীর দুপাশের সৌন্দয্য দেখতে দেখতে ৪ ঘন্টা রোমাঞ্চকর এক জার্নি শেষে পৌছে গেলাম মহেষখালী। ডেইল ঘাট থেকে মহেশখালী পর্যন্ত বোট ভাড়া প্রতিজন-১০০ টাকা এবং ঘাট ভাড়া ৫ টাকা। মহেলখালি পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ১.৩০ হয়ে যায়, মগনামা ঘাট থেকে টমটম নিয়ে চলে যাই গুরুকগাট্টা বাজারে। ঘাট থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা টমটম ভাড়া। আলামিন হোটেল এ বিভিন্ন আইটেই এর সামুদ্রিক মাছ এবং ভর্তা দিয়ে ভুরিভোজ সেরে গুরুকগাট্টা বাজার থেকে একটি রির্জাভ টমটম (১৫০ টাকা ভাড়া) নিয়ে চলে যাই ঘটিভাঙ্গা বাজার এ। ঘটিভাঙ্গা থেকে জোয়ার এর সময় লালবোট ছেড়ে যায় সোনাদিয়ার উদ্দেশ্য, আপনি যদি ট্রেকিং করতে পছন্দ করনে তাহলে বোটে করে না গিয়ে হেটে ও চলে যেতে পারবেন সোনাদিয়া ১ ঘন্টার মতো ট্রেকিং করলেই পৌছে যাবেন সোনাদিয়া বর্ষার সময় কাদা থাকে তাই শীতকালে যাওয়া ভালো। বোটভাড়া প্রতিজন ৩০ টাকা করে। ট্রীপম্যাট যদি বেশি তাহলে বোট রির্জাভ করার ও সুযোগ রয়েছে। ৮০০/৯০০ টাকা নিবে আসা যাওয়া। বোট ছাড়ার কিছুক্ষন পর অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম, দুপাশের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট মাঝখানে বয়ে চলা নদী এবং মাছ ধরার নৌকা এককথায় মনমুগ্ধকর, যা আপনার মন ছুয়ে যেতে বাধ্য। ২০/২৫ মিনিট বোট জার্নি করার পর আমরা পৌছে গেলাম সোনদিয়ার পশ্চিম পাড়াতে। সোনদিয়া পুরো দ্বীপে মোট দুটি পাড়া রয়েছে একটি পূর্ব পাড়া এবং অন্যটি পশ্চিম পাড়া। টিওবির পোস্ট দেখে একজন গাইড এর নাম্বার সংগ্রহ করে রেখেছিলাম গাইড এর নাম (আলমগীর ভাই মোবাইল নং- ০১৮১৮ ৮৫৭৯৫১) অসাধারন মানুষ সারাক্ষণ ঠোটের কোণে হাসি লেগে থাকে মানুষটার। আলমগীর ভাই মহেশখালী এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সকাল থেকে, এবং মহেশখালী থেকে হরেকরকমের মাছ কিনে নিয়ে যান এবং সেগুলো দিয়ে রাতের খাবার সেরে আমরা চলে গেলাম সোনাদিয়া বীচ এর পাড়ে আলমগীর ভাইয়ের করা ছোট একটা ঘরে একদম বীচের সাথে লাগানো এই ঘরে অসাধারন একটি কাটালাম। ঘূণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে ক্যাম্পিং করা হয়নি। সকাল বেলা একদম ভোর বেলা উঠে বীচের হাজার হাজার লাল কাকড়ার ভিড়ে যেনো বীচে পা ফেলা দায়। কাকড়া গুলোর মাথার উপর দুটো শিং এন্টেনার মতো কাজ করে বিপদের আভাস পেলেই গর্তে ঢুকে যায় । বহুকষ্টে কয়েকটা ছবি এবং ভিডিও করতে সক্ষম হলাম। ১ ঘন্টার মতো বীচ এ ঘুরাঘুরি করে ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে এবং নাস্তা করে ৯ টার বোট ধরলাম জোয়ার চলে গেলে আবার বিপত্তি তাই আর দেরী না করে বোটে করে চলে আসলাম ঘটিভাঙ্গায়। ঘটিভাঙ্গা বাজার থেকে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির এবং স্বর্ণমন্দির এবং চ্যালিয়াতলী বাজার যাওয়ার জন্য ৯০০ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি রির্জাভ করলাম, পূর্ণিমার কারণে র্স্বণমন্দিরে ঢুকতে পারিনি তাই আদিনাথ মন্দির এবং পাশে সেলফি ব্রীজ দেখে চ্যালিয়াতলি বাজার/জনতা বাজার চলে এলাম। চ্যালিয়াতলী বাজার থেকে ডাইরেক্ট চকরিয়ার সিএনজি পাওয়া প্রতিজন ৫০ টাকা করে। চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা এবং চিটাগং এবং কক্সবাজার সবদিকের প্রায় সব কোম্পানির ই বাস পাবেন। আমরা চিটাগং বাস ধরে চিটাগং চলে এলাম যারা ঢাকা যাবেন তারা সরাসরি ঢাকা চলে যেতে পারবেন।

বি:দ্র- সোনাদিয়া বীচ কচ্ছপ এর প্রকৃতিক প্রজনন স্থান ক্যাম্পিং করার সময় অতিরিক্ত আলো জ্বালাবেন না আলোতে কচ্ছপ এর সমস্যা হয়। আর যেখানে সেখানে ময়লা বা প্লাস্টিক ফেলে পরিবেশ এর ক্ষতি করবেন না। সোনাদিয়া বীচ আমাদের দেশের সম্পদ একে রক্ষা করা আমাদের ই দ্বায়িত্ব।
কোন মন্তব্য নেই