জমিদারদের টাঙাইল।

পার্বণ ডেস্কঃ 
জমিদার বাড়ি যাব ইচ্ছেটা বহুদিনের।
একদিনে কতোগুলাই বা দেখে পারব সেটাও চিন্তার বিষয় ছিল,কারন জমিদার বাড়ি বললে প্রথমেই টাঙাইলের নাম আসবে যেখানে বেশ কিছু জমিদারবাড়ি রয়েছে।
তবু একদিনের ট্যুর যেহেতু তাই খুব সকালেই মহাখালীর বাস ঝটিকাতে উঠে টাঙাইলের পথে যাত্রা শুরু করলাম।
পথে এড হলো এবারকার ভ্রমন সঙীনি তন্দ্রা(এক্স কলিগ)।
প্রথমেই লক্ষ্য সকালের যমুনার কুয়াশাজড়ানো ঢেউ দেখা।
নতুন বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিল বাস, ভাড়া ছিল ২০০/।
সেখান থেকে লোকাল যমুনার বাসে উঠলাম ভাড়া ৩০/।
যমুনা যেতে যেতে পাশের সীটের এক আপুর সাথে পরিচয় যার বাড়ি যমুনার তীরবর্তী এক গ্রামেই।
যমুনা রিসোর্ট হয়ে মিলিটারি ক্যাম্পের পাশেই যে ট্রলার স্ট্যান্ড,উনি সেই ট্রলারে করেই ওনার বাড়ি যাবেন।
উনি আমাদের ভ্রমনের গল্প শুনে ওনার সাথেই ভ্যানে করে সেই নদীতীরে নিয়ে গেলেন।
যেতে যেতে যমুনা রিসোর্ট, মিলিটারী ক্যাম্প,মিলিটারী লেক,পাথর স্তুপ করে রাখা একটা যায়গা দেখাতে দেখাতে নিয়ে গেলেন।

Image may contain: tree, sky, grass, plant, outdoor and nature

খুব সুন্দর রাস্তা আর গাছের ছায়ায় ছায়ায় যেতে খুব ভালো লাগছিল।
নদীর তীর থেকে যমুনা ব্রীজ দেখা যায়।
পাথর রাখা যায়গাটাতে বেশ কিছুক্ষন বসে নদীর মাতাল হাওয়া খেলাম।
এখানে নৌকা, ট্রলার আর স্পীড বোট পাবেন নদীতে ঘুরাঘুরি করার জন্য।
আমাদের হাতে লিমেটেড সময় তাই আমরা ফিরে এলাম স্বল্প সময়েই।

Image may contain: plant, tree and outdoor

আবার ভ্যানে সেই গোলচক্কর, গোলচক্কর থেকে বাসে করে টাঙাইল নতুন বাসস্ট্যান্ডে।
নাস্তা আর টাঙাইলের চমচম খেয়ে নিলাম।
এখানে ডিসিলেক বাইরে থেকেই দেখে নিলাম।(যেহেতু সময় কম)।
এরপর অটোতে করে সন্তোষ।
ভাড়া নিল ৩০ টাকা করে।
সন্তোষ মানেই মাওলানা ভাসানীর বাড়ি, তার করে যাওয়া স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সহ মাওলানা ভাসানী প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়।
আগে ওনার কবর (স্থানীয় লোকজন এর ভাষ্য মাজার) দেখে নিলাম।
ঢুকলাম ওনার বাড়ি তে।
ওনার বড় মেয়ের সাথে দেখা এবং কথা হলো যার ভিডিও আমি আমার ওয়ালে কাল রাতেই শেয়ার দিয়েছি।
উনি এমন একজন জননেতা যিনি নিজের এবং সন্তানদের জন্য শুধু থাকার ঘরটা ছাড়া কিছুই রেখে যান নি। এবং সেই ঘরটাও ছিলো টিনের ঘর।
যা পরবর্তী সময়ে তার ছেলের বউ এখন বিল্ডিং করে রেখে গিয়েছেন।
এরপর ওনার তৈরী বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় টা দেখে নিয়ে শুরু করলাম পরবর্তী যাত্রা।
এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার ছোট মামা CSE কম্পলিট করেছেন, যদিও আমার তখন এই যায়গাটা দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনি।


Image may contain: one or more people, tree and outdoor

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যায়গাগুলো ঘুরে দেখার উদ্দ্যেশ্যে একটা অটো রিজার্ভ করলাম।
উনি যে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেখানে পথেই কাশ্মিরী মাজার নামের এক মাজার যা কিনা মাওলানা ভাসানী হুজুরের মামার মাজার।
এবং ইনিও এলাকার লোকজনের জন্য মসজিদ মাদ্রাসা স্কুল এর জন্য বহু কিছু করে গিয়েছেন বলে জানলাম।
এরপরের দশটাকার মসজিদ।
জ্বি।
ঠিকই শুনেছেন দশ টাকার মসজিদ।
আগের দশটাকার নোটে একটা মসজিদের ছবি ছিল যেটা আটিয়া মসজিদের ছবি বলে এটাকে দশটাকার মসজিদ বলা হয়ে থাকে।
এটার প্রত্যেকটা দেয়াল যেন একেকটা নিখুঁত কারুকাজ এর ছোয়া, এত আগে মানুষ এতটা শৈল্পিক ছিল যা কিনা চিন্তার ও বাইরে আসলে।
এবং এই শিল্প টাঙাইলে এসে প্রত্যেকটা পুরাতন স্থাপনা দেখে বুঝেছি।
আতিয়া মসজিদ এর একটু সামনেই এক মিনার এর একটা মসজিদ পেলাম।
এই মসজিদ এক রাতের মধ্যেই নাকি উঠেছে তাই এটাকে গায়েবী মসজিদ বলে থাকে এলাকার লোকে।
গায়েবী মসজিদ পার হয়ে আতিয়া মাজার।
মাজার দেখার পর সোজা করোটিয়া বাজার(স্থানীয় লোকেরা বলে করাতিয়া)।
এখানেই আমাদের রিজার্ভ অটো ছেড়ে দিলাম।
২০০/ ভাড়া ছিল সন্তোষ থেকে।
লাঞ্চ করে নিলাম, ভরপুর খাবার বাট দাম ১০০/ মধ্যে।
করোটিয়া বাজারের পাশেই করোটিয়া জমিদার বাড়ি।
যার টোটাল তিনটা গেট।
একটা পুর্ব গেট,একটা মধ্য দেউড়ি,আরেকটা লাইটহাউজ বা মেইন গেইট(দেউড়ি)।
তিনটা গেইট ই বন্ধ থাকে। এই জমিদার বাড়ির অপোজিটেই নিজস্ব কবরস্থান এনাদের।
জমিদার বাড়ির এক অংশের অট্টালিকা এখন স্কুল হিসেবে ব্যাবহার করা হয় বলেই ছোট ফটকের মত স্কুলের গেট থেকে ভেতরে যেতে পারছিলাম।
কত বড় বিশাল জমিদারীত্ব আজ সব ফাকা।
শুনশান নিরবতা।

Image may contain: outdoor

কেয়ারটেকার আছে অবশ্য।
জমিদার বাড়িতে হাজারো গাছ আর বেশ কয়েকটা দিঘীর দেখা মিলেছে।
পুরো টাঙাইলে দিঘী,পুকুরের সংখ্যা আর খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক বেশি।
বেশ কিছুক্ষন এখানে থেকে আবার বের হলাম।
এবার লক্ষ্য মহেড়া জমিদার বাড়ি তথা পুলিশ ক্যাম্প।
এবার কোনো রিজার্ভ নয় এখান থেকে সোজা নাটিয়াপাড়ার মেক্সী গাড়িতে উঠলাম।
বাস,সিএনজি, রিকশা সবই পাবেন এখানে অবশ্য।
মেক্সীতে ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা করে।
মেক্সীতে বেশ কিছু মহিলা ছিলেন, গল্প করতে করতে একজন মহিলা যার সাথে একজন ছেলেবাচ্চা ছিল।
সে বললো আপনারা নাটিয়ায় নামেন আপু,আমিও শ্বশুর বাড়ি যাবো তো,আমার হাসব্যান্ড অটোরিকশা চালায়।
আমাকে নিয়ে যাবে,অই একই দিকেই মহেড়া আপনারা যেতে পারবেন।
ঠিক তাই করলাম।
মহেড়া পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা জনপ্রতি।
মহেড়া গিয়ে চোখ ছানাবড়া।
এবার মনে হলো টাঙাইল এসে যদি কেও মহেড়া না দেখে তাহলে সে যেন টাঙাইল না যায়
পুলিশ ক্যাম্প হওয়াতে এবং এটার রক্ষনাবেক্ষন পুলিশরা করে বিধায় জমিদার বাড়ির সবগুলো যায়গা এত এত এতই সুন্দর করে রিটাচ করা যেন মনে হবে গতকাল ই করা হয়েছে এই সব কিছু ।
মহেড়া পুরোটা দেখতে ৩ ঘন্টাও কম আসলে।
গেট, লেক,সিড়ি,মিউজিয়াম,প্রত্যেকটা বিল্ডিং, শিশুপার্ক,কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম রেল,উফফফ সবমিলিয়ে অস্থির উপস্থাপন।
যতগুলো প্লেইসের ছবি তুলা যায় তুলেছি।
এবং সবচেয়ে কস্টের কথা হলো সঠিক ফ্রেইমিং আর সুন্দর আমার নিজের কোনো ছবিই হয়নি এবার।
এবার ফেরার পালা।
মহেড়া থেকে ১০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে এলাম ধল্লা।
সেখান থেকে ঢাকার বাসে সরাসরি ঢাকা।
ভাড়া নিয়েছে ৮০ টাকা করে জনপ্রতি।
৯ টার মধ্যে রুমে ফিরেছি।
কিন্তু আজ সারাদিনে এই ঘোরার রেশ কাটাতেই পারছিনা।
আবারো যাবো টাঙাইল, যেখানে ফেসবুক বান্ধবী মাওয়া (যার সাথে এই জার্নির ফাকে ১০ মিনিটের দেখা হয়েছিল যেখানে পথে পরিচিত সেই লিপি আপু,আর রুম্মেট এর ছোট পুচকী ম্যানোলা(মধুপুর বাসীনি)।
এবং একদিনের ট্যুরেই দেখে আসব ২০১ গম্বুজ মসজিদ,মধুপুর গড়,রানীকুঠির বাকী ইতিহাস কথিত জমিদারবাড়ি,আর এলেঙা+পাকুটিয়া+পাকুল্লা জমিদার বাড়ি (যদি পসিবল হয়)।
টাঙাইলের মানুষজন খুবই হেল্পফুল,এবং এখানে আসলে পুরো সবুজের একটা আলাদা সৌন্দর্য্য খুজে পাবেন এটা ঠিক।

Image may contain: sky, tree, outdoor, nature and water

এখানকার গ্রামের রাস্তাঘাট ও বেশ সুন্দর এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বেশ।
সবমিলিয়ে লো বাজেট ডে ট্যুর হিসেবে টাঙাইল হতে পারে আপনার পছন্দের একটা যায়গা।
ট্যুরে থাকাকালীন আপনার ব্যাবহার যথেষ্ট ভাল রাখুন,
যত্রতত্র ময়লা ফেলে এসে নিজের পশুত্বের প্রমান দিবেন না।
ভ্রমন হোক অন্যতম মৌলিক চাহিদা

কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.