প্রতারণা সন্দেহ থেকে বন্ধু

সাহিত্য পার্বণ ডেস্ক ঃ
সেলিম পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশ থাকে , বৃদ্ধ মায়ের জন্য একটু বেশি পরিশ্রম করতে হয়। মাকে প্রতি
মাসে ৪০০০/৫০০০ হাজার টাকার ওষুধ লাগে । এতো ডাক্তার
ওষুধ করেও মায়ের শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি নেই। এভাবেই
কাটছিল তাদের দিন, মাঝে মাঝে মায়ের জন্য সেলিমের মন খারাপ থাকে। কোন একদিন
সন্ধ্যায় সেলিম বাড়ি থেকে ফোন পায় তার মায়ের নাকি প্রচণ্ড শরীর খারাপ। হাসপাতালে
নিয়ে যেতে হবে টাকার খুব প্রয়োজন, মাকে ভিডিও কলে দেখার পরে সেলিম একটুও শান্তিতে
থাকতে পারছে না। অনেক জায়গায় গিয়ে ও সেলিমের পরিবের টাকা জোগাড় করতে পারিনি একমাত্র; ভরসা তাই সেলিম। সেলিমের কাছে ও টাকা নেই তার সহকর্মীদের কাছ থেকে ধার করে অনেক্
কষ্টে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার মত কিছু টাকা জোগাড় করেছে। কিন্তু
সমস্যা হল এখন তো রাত ব্যাংকও বন্ধ টাকা পাঠাবে কিভাবে। অনেক ভেবে
চিন্তে বিকাশ ছাড়া আর কোন উপায় নেই, তাই শেষমেশ বিকাশই একমাত্র অবলম্বন টাকা পাঠানোর। বেশ মোটা
অংকের টাকা বিকাশ লিমিট অতিক্রম করছে তাই বাক্তিগত নাম্বার ছাড়াও আরও দুটি নাম্বার
এ টাকা পাঠাতে হচ্ছে। তিন ভাগে টাকা পাঠাতে হবে ,সেলিমকে কিছুটা হলেও চিন্তা মুক্ত দেখাচ্ছে অবশেষে টাকা
পাঠাতে পারছে এইভেবে। অন্য দিকে সেলিমের মায়ের অবস্থা আরও বেশি অবনতির দিকে। সেলিম তার
বাড়ীর নাম্বার এ আগে টাকা পাঠিয়েছে কারণ আগে আগে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করতে পারে এই
ভেবে। সেলিমের ছোটো ভাই দিক্বিদিক ছোটাছুটি করছে কিভাবে সে টাকা গুলো
নিবে এমন একজন বিকাশ এজেন্টকে খুঁজছে হাসপাতালের আশেপাশে। গ্রামে
রাত ১০ টা মানে অনেক রাত হাসপাতালের আশেপাশের দোকান গুলো তখন প্রায় বন্ধ । হাসপাতালের
কউন্টার থেকে ছোটো ভাই ফোন জানতে পারলো মাকে এখুনি অপারেশন করাতে হবে অবস্থা বেশি ভাল
না। এখুনি টাকা লাগবে হাসপাতালের বাহির থেকে অনেক জিনিস কিনতে হবে।
ছোটো ভাই
বিকাশ এজেন্ট খুজেতে খুজতে শেষে একটা অর্ধ বন্ধ দোকানের সন্ধান পেল। দোকানদার
কে বিষয়টা খুলে বলার পর রাজি হয়ে গেল। নুম্বেরটা
সেলিমকে পাঠিয়েই তার ছোটো ভাই পাশের দোকানে ওষুধ, আর অপেরেশনের জিনিসগুল
কেনার জন্য গেল। ছোটো ভাই জিনিস কিনতে কিনতে ভিতরের দিকে ঢুকে গেল কিছুটা, এদিকে সেলিম টাকা পাঠিয়ে বার বার ফোন করেও কারও খোঁজ পাচ্ছে না। ওদিকে হাসপাতালের
সবাই অপেক্ষা করছে জিনিসপত্র আর ভর্তির টাকার জন্য। সেলিমের
ছোটো ভাই ওষুধ প্রস্তুত রেখে টাকা নিতে আসলো দোকানদার এর কাছে এসে দেখে দোকান বন্ধ
দোকানদার নেই। দিক্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে কান্না করতে করতে মাটিতে হাটু গেড়ে
বসে পড়লো। ভেবে পাচ্ছে না এখন কি করবে, কোথায় পাবে টাকা,
কিভাবে করবে মায়ের অপারেশন?
কিছুক্ষণ পরে মন খারাপ করে কাঁদো কাঁদো চোখে ফিরে আসলো হাসপাতালে
। এসে দেখে সবাই স্বাভাবিক প্রস্তুতি চলছে মায়ের অপেরাশনের, ছোটো ভাই ভেবে পাচ্ছে এসব কিভাবে সম্ভব। টাকা কে
দিয়ে গেলো, কিছু সময় পরে সে জানতে পারে দোকানদার অনেখন অপেক্ষা করে যখন টাকা
নেয়ার জন্য কেউ আসছিল না তখন দোকানদার নিজের বাস্ততার জন্য নিজেই এসে রুগীর লোকজনকে
খুঁজে টাকা দিয়ে চলে গেছে। মায়ের অপারেশান ও সফল্ভাবে শেষ হল সকলে মুখে একরাশ হাসির ঝিলিক
নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।
কোন মন্তব্য নেই