মান্দিরা মিথ্যা বলতে জানেনা, চুরি করেনা।

পার্বণ ডেস্ক ঃ
কয়েক দিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের গারো আদিবাসীদের একটি অংশ 'মান্দি' দের গ্রামে। মান্দিদের বাস মূলত বনে। এখন এ বনে তো কখনো অাবার দেবতার ইচ্ছায় অার কোন বনে বসতি গড়া। মান্দিদের সম্পর্কে প্রথম জানা ঢাকা থিয়েটারের 'বনপাংশুল' নাটক দেখতে যেয়ে। নাটকার সেলিম অাল দীন এর এক অসাধারণ সৃষ্টি এবং নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নির্দেশনায় যা দর্শককে নিয়ে গিয়েছিলো অন্য মাত্রায়।
এখন বন তার রূপ হারিয়েছে, বাঙালি জনগোষ্ঠীর বসতি অার খ্রীস্টান ফাদারদের কৌশলগত ভাবে মান্দিদের খ্রিষ্টান ধর্মে নিয়ে অাসা মান্দি সমাজে এনেছে পরিবর্তন। তবুও এখনো টিকে অাছে তাদের সংস্কৃতির অবশিষ্টাংশ। মান্দি সমাজে যেকোন অনুষ্ঠানে বা সফল কিছুতে অথবা প্রতিদিনের সন্ধ্যায় নিজেদের তৈরি চু বা বিচা পানের অাসর বসে। এ দু ধরণের পানিয়র নেশায় মেতে উঠে তাদের আনন্দ আয়োজন। যে বাড়িতে ছিলাম দু রাত তাদের উঠানে উঠছে নবান্নের সোনা ধান। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে এসেছে বাড়িতে এসেছে এ ধান।

ধান কাটার কাজ করা শ্রমজীবী এবং মালিক, প্রতিবেশী ও অতিথি সবাই মিলে এসো চু এর আনন্দে। চু পান করতে করতে গল্প গান মজা করা মাঝে জীবনের স্বাদ। আজও মাটির ঘর, আজও উঠান লেপা, ভোর হতে মোরগের ডাকে জেগে উঠা, মুরগির ডিম পড়া। মান্দি সমাজে মিথ্যা বলা চুরি করার সংস্কৃতি নেই। মিথ্যায় ভরা বাংলাদেশে এ এক বিচিত্র বিস্ময়। কত বৈচিত্র্যে ভরা আমার স্বদেশ। তাকে আমরা কতটুকুইবা জানি। মান্দিদের বন কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে কত সরকারি কর্মকর্তা, মহাজন, ববসায়ী। এ মাটির পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় মান্দি জাতিরা হতে পারে পথপ্রদর্শক।

বাংলাদেশের এই রকম বৈচিত্র্যময় কত জাতিসত্বা আজ হারিয়ে যেতে চলেছে, কি বলার বা করার আছে। শত ফুল ফোটার মত ফুটে থাক এ সকল জাতি। তা নাহলে আমরা হারিয়ে ফেলবো আগ্রাসী বানিজ্যিক সংস্কৃতির কাছে সবকিছু।

কোন মন্তব্য নেই