ফাহাদের চিঠি
প্রিয় মা,
শেষ কথাটা কি বলেছিলে মনে আছে তোমার ? হ্যাঁ মনে নেই আমি বলছি, তুমি বলেছিলে আমি যেন ঢাকায় পৌঁছে তোমাকে ফোন করি। যান মা, গতকাল যখন তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার গাড়িতে উঠলাম তখন কেন যেন ইচ্ছে করছিলো তোমার কাছে আবার ফিরে যায়, ঢাকায় ফিরতে মন চাচ্ছিলো না। তবুও টিউশনির জন্য আর ১০১১ নাম্বার রুমের মায়ায় আমাকে ফিরতে হলো। রুমে ফিরে গোসল সেরেই তোমাকে ফোন দিলাম আর মনে মনে ভেবেছিলাম ৪/৫ দিন পর তোমার কাছে ফিরে যাবো,তোমাকে না জানিয়ে। হ্যাঁ মা, কথা শেষ করে গিয়েছিলাম পড়াতে তারা আমাকে যেভাবে আপ্যায়ন করলো আজ আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কারণ কি? সব ঠিকঠাক ছিলো রাত ৮ টায় ১০১১ রুমে ফিরেই আমার প্রিয় বালিশটাকে জড়িয়ে ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম। তখনই ডাক পড়লো ২০১১ নাম্বার রুম থেকে। আচ্ছা মা, ২০১১ আর ১০১১ রুমের মধ্যে কি খুবই পার্থক্য? বলো মা! রুমের ভালোবাসা জন্য আমি ওদের ৫ জনের সাথে দৌঁড়ে গেলাম। আমার ভালোবাসাটা মনে হয় অনেক বেশি ছিল, যে কারণে আমাকে আমার প্রিয় ক্যাম্পাস টাও ছাড়তে হলো। ওরা যখন আমার পিঠের উপর এলোপাতাড়ি আঘাত করছিল তখন তোমাকে অনেক বেশি মনে পড়ছিল। জানো মা আমাকে ওরা পানিও খেতে দেয়নি। ওরা আমাকে প্রচুর মেরেছে মা, আমি নাকি কি সব লিখেছিলাম? আচ্ছা মা, আমি তো বাংলা ভাষায় স্বাধীন দেশে আমার মত প্রকাশ করেছিলাম। ওরা কি আমার লেখা কি বুঝতে পারিনি? না আমি অনেক জ্বালাময়ী কথা লিখেছিলাম? মনে হয় আমার লেখার ভাবার্থ অনেক শক্ত ছিল। ভাইয়ের রক্তে অর্জিত ভাষায় লিখলে হয়তো একটু বেশি জ্বালাময়ী হয়? মাগো আজ তোমাকে না জানিয়ে তোমার কাছে ফিরতে হলো। কিন্তু আমি যে তোমাকে মা বলে থাকতে পারছিনা।আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। আর একটা কথা মা, তুমি আমার শরীর দেখতে এসো না সহ্য করতে পারবেনা, দয়া করে এই কথাটা রেখো। আর ১০১১ রুমের সকলকে ভালো থাকতে বলো।
ইতি
ফাহাদ, বুয়েট।
ফাহাদ, বুয়েট।
কোন মন্তব্য নেই