ঝরে পড়া গোলাপ

ঝরে
         পড়া
গোলাপ





নাম সুজন গ্রামে তার বেড়ে উঠা। গ্রামে বাড়ী হলে কি হবে সব সময় চেষ্টা করে বইয়ের লেখা ভাষায় কথা বলতে। গ্রামের আঞ্চলিকতা ঝেড়ে ফেলে, বইয়ের ভাষা আর প্রকৃত বাংলায় কথা বলাতে সবাই তাকে একটু অন্য চোখে দেখতো। মাঝে মাঝে বন্ধু ও বড় ভাইয়েরা তাকে ভাবিষ্ট বলে ডাকতো। কিন্তু সে কারও কথায় কিছু মনে করতো না বরং সে তার চেষ্টাকে ধরে রেখেছে। প্রকৃত বাংলায় কথা বলার পাশাপাশি ¯^াভাবিকতার চেয়ে একটু দ্রুত কথা বলতো, যতই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করুক না কেন তার কথার মধ্যে ছিল আঞ্চলিকতার ছোঁয়া। শব্দের অস্পষ্ট উচ্চারণ, শব্দের অংশ পড়ে যাওয়া এসব কিছু মিলিয়ে দ্রুত কথা বলার কারণে অনেকে তার কথা ঠিক ভাবে বুঝতে পারতো না। এটা নিয়ে বেশী ঝগড়া হতো তার মায়ের সাথে কারণ সুজনের আম্মা কিছুটা কানে কম শুনতে পেত। দ্রুত কথা বলা তার আম্মার পছন্দ ছিলো না আর তার সাথে আছে অস্পষ্ট উচ্চারণ সব কিছু মিলিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে আসলে ঝগড়া লেগেই থাকতো। সুজনেরা ছিলো দুই ভাই দুই বোন আর বাবা মা। সে দেখতে সুদর্শন হওয়ায় আশে পাশের মেয়েদের নিয়েও মাঝে মাঝে কথা শোনা যেত। গ্রামের পরিবেশে এসব কথা ভাল শোনায় না বলে তার বাবা মা খুবই লজ্জাই থাকতো। তাই সুজনের মাধ্যমিক শেষ হলেই তার বাবা শহরের কলেজে ভর্তি করে দেয়। খুলনা শহরে এসে সুজন আযমখান সরকারি কমার্স কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ¯œাতক ভর্তি হয়। বেশ ভালই কাটছিলো তার শহরের জীবন তবে মাঝেমাঝে বাড়ীর কথা ভেবে কান্নাকাটি করতো, মন খারাপ করে বাসায় বসে থাকতো। ও হ্যাঁ খুলনা এসে মেসে থাকতে শুরু করে সে এবং সেখান থেকে ব্যাচ, কলেজে যাওয়া আসা করে প্রতিদিন। পাশাপাশি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার চেষ্টায় ভর্তি হয় কবিতা আবৃত্তিতে। প্রতিদিন কলেজে যাওয়া, সপ্তাহে তিনদিন বিকালে ব্যাচে যাওয়া, একদিন কবিতা চর্চার ক্লাসে এই নিয়ে বেশ ভালই কাটছে দিন। দেখতে দেখতে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলে ভর্তি হয় মঞ্চ নাটক চর্চায়, অভিনয়ের কৌশল শেখা মঞ্চে অভিনয় করা ছিলো উদ্দেশ্য। কবিতা চর্চা করা, অভিনয় শেখা, ব্যাচ, কলেজ এই নিয়ে তার সকল ব্যস্ততা তবে মাঝেমাঝে মন খারাপ লাগলে বাইসাইকেল নিয়ে নদীর পাড়ে ঘুরতে যেত।
কবিতা চর্চা আর মঞ্চ নাটকের ফলে অন্য সবার থেকে তার কথা বলার ধরন অন্য রকম , এসেছে পরিবর্তন যেটা সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে। কলেজে তার কোন ঘনিষ্ট বন্ধু না থাকলেও ব্যাচে এসে পরিচিত হওয়া দু’জন বান্ধবীর সাথে তার ভাল সম্পর্ক তৈরী হলো। কয়েকদিন পরে জানতে পারলো তারা তিনজন একই কলেজে পড়ে তবে বিভাগ আলাদা। একটি বিষয়ে মিল থাকায় তাদের একই ব্যাচে পড়া হয়। ব্যাচ শেষ করে তারা তিনজন মাঝে মাঝে ঘুরতে যায় ফ্রী থাকা শর্তে। রাস্তায় চলতে চলতে বা পার্কে বসে তাদের গল্পের বিষয়ের কোন ঠিক থাকেনা সাথে বাদাম, ফুচকা তো থাকবেই সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতে তাদের কোনদিন ভুল হয়না। বান্ধবী একজনের নাম ছিলো ফারজানা গ্রামের বাড়ী বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট ধর্মে মুসলিম থাকতো মেসে পড়াশুনা মর্কেটিং বিভাগে। দূর সম্পর্কের এক বোনের বাসায় থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করতো নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় যুথীর গ্রামের বাড়ী, তবে ধর্ম ছিলো হিন্দু। অবশ্য সুজন ছিলো ইসলাম ধর্মের অনুসারী, নিত্যদিনের কিছুটা সময় একসাথে কাটাতে কাটাতে তাদের মধ্যে তৈরী হয় গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন।



ভাল সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে, ম্যাসেজে তাদের কথা হতো। ইতোমধ্যে সুজন আবিস্কার করতে পারলো ব্যাচে বসে যুথী তার দিকে বার বার তাকায় আবার যখন সে কথা বলে তখন মনযোগী শ্্েরাতা হিসাবে গভীর ভাবে তার কথা বলার ধরন, অঙ্গ ভঙ্গি অনুসরন করে। চোখে চোখ পড়তেই যুথী চোখ ফিরিয়ে নিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিতো, গল্প, আড্ডায় মেতে থাকতে থাকতে তার হয়তো সুজনকে মনে ধরেছে। তবে সুজনকে যে যুথীকে ভাল লাগে না তা কিন্তু নয়। তবে ভাল লাগার কথাটি প্রকাশ করার মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়ায় ধর্ম। অন্যদিকে ফারজানার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সুজন, কারণে অকারণে তাকে ফোন দেওয়া ব্যাচে না গেলে খোজ নেওয়া অভিভাবকের মতো শাসন করা সব কিছুই করে যাচ্ছে অবলীলায়। তিনজনের কেউ কাউকে বলতে পারছে না নিজের একান্ত আপন ভাললাগার কথা গুলো। সুজন যেদিন ব্যাচ মিস করে সেই দিন বান্ধবী দু’জনের আড্ডা গল্পে আলোচনার বিষয় ও কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সে। আলোচনার বিষয় গুলোতে থাকতো কিভাবে কথা বলে, কথা বলার সময় হাত চোখ গুলো কিভাবে ঘুরিয়ে থাকে, এমনকি যুথী কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে সুজনের কথা বলার ধরনগুলো, ঠিকঠাক পারিনি বলে হেসে কুটি কুটি হয়েছে দু’জন। দ্রুত গতিতে কেটে যাচ্ছে তাদের সোনালী দিনগুলো, তবে মনের কথা কেউ কাউকে জানাতে না পারলেও ঠিক ¯^প্নের পরিধি বেড়েই যাচ্ছে। সবাই যুদ্ধ করছে মনের সাথে একসাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবছে আবার একা একা হাসছে।
এখন তারা কলেজে ক্যাম্পাসে বসেও মাঝে মাঝে আড্ডা দিচ্ছে কোথাও ঘুরতে গেলে কাউকে রেখে যাচ্ছে না আবার একজন কলেজে যায়নি তাতে কি হয়েছে ফোন দেওয়া মাত্রই তাকে হাজির হতে হবেই না হলে সকলকে খাওয়াতে হবে। খাওয়ানোর ভয়ে সামান্য ক্ষতি হলেও হাজির হয় নির্ধারিত স্থানে দুপুর পর্যন্ত চলে ভালবাসার দুষ্টামি। তবে দুষ্টুমির ফাঁকে যে যার পছন্দের বিষয়গুলো ভাললাগার মানুষটির মাঝে খুঁজে নিচ্ছে। সুজন আড়চোখে যুথীকে দেখছে, ফারজানা সুজনকে আবার সুজন যখন কথা বলছে যুথী মন ভরে উপভোগ করছে। মনের অজান্তে যে যার ভালবাসার বাক্স ভরে নিচ্ছে মিটিয়ে নিচ্ছে দেখার তৃপিÍ।


একদিন ভোর বেলা সুজনের মোবাইলে নতুন একটি নাম্বার থেকে মিস কল আসে , আসার সাথে সাথে কল ব্যাক করে জানার চেষ্টা কিন্তু ঘটলো বিপত্তি কেউ কথা বলে না। কল কেটে গেল কিনা সেটা যাচাই করার জন্য মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে নিলো সব ঠিক আছে কয়েক মুহুর্ত পরে ভেসে এলো অপূর্ব মায়া ভরা, ভালবাসা মাখা কণ্ঠ¯^র বুঝতে আর বাকী থাকে না অপর প্রান্তে কে আছে। জানা যায় নতুন যে নাম্বারটিতে কথা হচ্ছে সেটা তার বড় বোনের, বোন জামায় মিলে রাতে নিকট এক আতœীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলো কিন্তু রাতে আর ফেরা হয়নি। মোবাইলটা ভুলে রেখে গেছে আরও জানা যায় আজ দীর্ঘ সময় কথা হচ্ছে অন্যদিন না হতেও পারে কারণ তারা কিছু মনে করতে পারে অথবা বাড়ীতে বাবা মাকেও জানাতে পারে সেই ভয়ে। তবে প্রয়োজনে কথা বলা যাবে কিছু সময়ের জন্য, কথা শেষ না হতেই যুথী বলতে লাগলো ফোন রাখতে হবে অনেক সময়তো কথা হলো আজ, তাছাড়া যদি কেউ ফোন করে নাম্বার ব্যস্ত পায় তবে বিপদ। ্েফান কাটার জন্য উদগ্রীব তবে কাটতে কারও ইচ্ছে করছিলো না তবুও সব কিছু বিবেচনা করে লাইন কাটার আগে সুজন বললো ”আজ দিনটি মনে হয় ভাল যাবে”। কথাটি শোনা মাত্রই অপর প্রান্ত থেকে চমৎকার অভিনব এক হাসির ফোয়ারা ছলছলিয়ে উঠলো একটু উচ্চ¯^রে অসাধারণ শব্দটি উচ্চারণ করতে দুইবার চিন্তা করার প্রয়োজন হয়নি সুজনের। মেসের এক বড় ভাই অসাধারণ শব্দটির কারণ জানতে চেয়ে বলতে শুরু করলো প্রেমে পড়লে নাকি? অযথা ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে সুজন নিজের কাজে মন দিলো।
আজ বিকালে যুথী সুজন একসাথে ব্যাচে গেল অন্যদিন ফারজানাকে সাথে নিয়ে ব্যাচে যেতো যুথী। ওদের দু’জনের বাসা একই দিকে হওয়াতে সব সময় একই সাথে যাওয়া আসা করতো তবে ব্যাচে আসার পথে সুজনের বাসার সামনে দিয়ে আসতে হয়। আজ ব্যাচে আসার ব্যতিক্রম হওয়াতে ফারজানা তো রেগে আগুন তারপরে এসে দেখে ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই আগুনের গোলা ছুড়ে বলতে লাগলো দিন আমারও আসবে। ওকে রেগে যেতে দেখে সুজন ও যুথী একটু খুনসুটি করে অট্টো হাসিতে মেতে ওঠে, এটা ভালভাবে গ্রহণ করতে পারিনি ফারজানা তাই অভিমান করে কারও সাথে কথা না বলে মুখ ভার করে এক কোণে বসে আছে। তবে ফারজানা পিছনে বসলে কি হবে সুজন ও যূথী বসেছে সামনাসামনি । যে কেউ দেখলে বলে দিতে পারবে সুজন যান কিছু বলতে চায় এবং সেই না বলা কথাটি শোনার জন্য অপেক্ষায় আছে যুথী ব্যাচের সকলের কাছে আজ ওরা দু’জন অন্যভাবে ধরা দিয়েছে। ব্যাচের শিক্ষকও বলতে বাদ যায়নি তোমাদের কি হয়েছে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে? ফারজানা বিষয়টাকে ভালভাবে গ্রহণ করতে পারিনি সেটা তাকে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, হয়তোবা নতুন কিছু খুঁজে পেয়েছে। ব্যাচ শেষ করে কারও সাথে কথা না বলে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা ডাকলো, রিকশাতে উঠতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে আটকে দিলো যুথী। আমি কি করেছি যে তুই আমার সাথে এমন করছিস, কথা না বলে তুই থাকতে পারবি? শেষ কথাটি বলার আগে সুজনের কাছ থেকে প্রস্তাব এলো সবাইকে ফুচকা খাওয়াবে যুথী। প্রস্তাবটি মনে হয় ফারজানার মনে ধরেছে তাই কিছুটা রাগ কমিয়ে রিকশাটাকে বিদায় দিয়ে হাটার জন্য নির্দেশ দিলো । ঘোরাঘুরির জন্য সর্বদা পটু ছিলো ফারজানা, হেঁটে চলার মাঝে এক অন্য রকম আনন্দ আছে বলে জানাতে ভুল করিনি সুজন সাথে এক পোটলা বাদাম এগিয়ে দিলো। বাদাম খেতে খেতে পথ এগিয়ে যাচ্ছে তারা গল্পকে পুঁজি করে। গল্পের কোন এক ফাঁকে যুথী বলে শুনেছি বাদামকে নাকি প্রেম ফল নামে ডাকা হয় সুজন আমাদের কারও প্রেমে পড়লে নাকি? আমতা আমতা করে লজ্জায় লাল হয়ে কিছুটা একটা বোঝাতে লাগলো। ফারজানার কিছু একটা খুঁজে নিতে মোটেও কষ্ট হলো না এবং পার্কে বসে যখন তারা গল্প করছিলো তখন তার চোখ ছিলো ওদের দু’জনের উপর। ওরা দু’জন মেতে ছিলো প্রেম লীলায় দু’জন দুজনের চোখে চোখ রাখা কারণ ছাড়া উচ্চ¯^রে হেসে ওঠা। এসব দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেল ফারজানা তাই দেরী না করে উঠে পড়লো বাসায় ফেরার জন্য ফুচকা খাওয়া আজ আর হলো না।

সবাই যে যার মতো বাসায় ফিরলেও ফারজানা বাসায় ফিরেছে একরাশ অভিমান রাগ কষ্ট সাথে নিয়ে, বাসায় ফেরার পরে কিছুটা সময় মনের সাথে যুদ্ধ করে কিছুটা রাগ কমিয়ে রাতের খাওয়া শেষ করে অনেকটা সংশয় নিয়ে ফোন করলো। সুজন ফোন রিসিভ করার পরে শুরু হলো ইনিয়ে বিনিয়ে কতরকম অভিমানের কথা, প্রশ্ন ছুড়ে দিলো তোর আর যুথীর মাঝে অন্যরকম গন্ধ পাচ্ছি সত্যি করে বল তো, তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে ? ভয় পেয়ে গেল, ও কিছু বুঝলো কিনা ভেবে দিশেহারা সুজন তারপরেও না না বলতে বলতে অন্য বিষয়ে কথা ঘুরিয়ে নিলো। আচ্ছা কি এমন দেখলি যে এমনটা বলছিস প্রশ্ন ছুড়লো সুজন কিন্তু ফারজানা কৌশলে বলতে অ¯^ীকৃতি জানালো। নাছোড় বান্দা সুজন বেশ জোর করে জিঞ্জাসা করলো কিছু না এমনি শুনলাম এই আরকি বলে লাইনটা কেটে দিলো। বেশ চিন্তায় পড়ে গেল সুজন ওকি কিছু বুজে নিলো এসব নিয়ে ভাবছে, আসলে যুথী কি আামাকে ভালবাসে এমন কিছু প্রশ্নের চিহৃ এঁকে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে রাখা মোবাইলটাকে হাতে নিয়ে দেখতে পেল চমৎকার একটি কবিতার লাইন, ফোন দিতেই কিছু সময় বাজার পরে লাইনটা কেটে গেল, কোন কিছু না ভেবে আবারও ফোন দিলে কেউ রিসিভ করলো না। বইছে উথাল পাতাল ঝোড় হাওয়া মনের মাঝে, একটু বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিয়ে ফ্রেশ হতে গেল, নাস্তা শেষ করে নিজের কাজে বের হওয়ার আগে এসএমএস এসে জমা হলো মেবাইলের স্ক্রিনে। বাসায় অনেক আতœীয় আছে, ফোন রিসিভ না করার জন্য দুঃখিত। একটু বিরক্তি নিয়ে নাটকের মহড়ায় যোগ দিতে বের হলো সুজন ২/৩ দিন পরেই তার নাটক মঞ্চস্থ হবে তাই মহড়া কোনমতে মিস করা যাবে না, মঞ্চ কেমন হবে, কে কোন পোশাক পরবে ইত্যাদি বিষয়ে নাট্য পরিচালক বুঝিয়ে দিবেন। নাটকের মহড়া আজ যেন শেষ হচ্ছে না সবাই ডায়ালগ ভুলে যাচ্ছে পরিচালকের কড়া নির্দেশ আজ ছুটি হবে না সন্ধ্যা পর্যন্ত মহড়া চলবে। মোবাইল ব্যবহার নিষেধ সকলকে এই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে কারও কোন জরুরী কাজ থাকলে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষনা তবে চা বিরতীতে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে। অনেক সময় একটানা রিহার্সেল করার কারণে সবাই ক্লান্ত, দুপুরের খাওয়া বাবদ সকলে ৩০ মিনিট সময় পেলেও সুজনের বরাদ্দ হলো ১০ মিনিট। কারণ সে এই নাটেেকর নাম ভৃমিকায় অভিনয় করছে তাই সকলের চেয়ে তাকে বেশী কষ্ট করতে হবে বলে পরিচালকের কড়া নির্দেশ, সেই নির্দেশ মোতাবেক হালকা নাস্তা করে আবারও কাজে মনযোগী হলো। আজ আর ব্যাচে যাওয়া হলো না তবে তার চেয়ে বেশী যেটা মিস হলো চোখে চোখ রাখা একপলক দেখা এসব কথা ভাবতে ভাবতে সুজন অন্যমনস্ক হয়ে গেল পরিচালকের ধমক শুনে বাস্তবে ফিরে আসে। কেটে গেল একটি না দেখা দিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিতে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, মোবাইলটা তখনও বন্ধ ছিলো।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে মোবাইলটা বন্ধ দেখে তড়িঘড়ি করে অন করতেই বেজে উঠলো, রুমের অন্য সবাইকে ভাল করে দেখে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত হতে রাগ, অভিমান ভরা কন্ঠে শুরু হলো বলা, তোমাকে ফোন করেছি ৭০-৮০ বার ম্যাসেজ করেছি ২০-২৫ টা কোন উত্তর তো পেলাম না বরং ফোন দিয়ে বন্ধ পেলাম এসবের মানে কি? ব্যাচে গেলাম তোমাকে পেলাম না, যাওয়ার পথে তোমার বাসার সামনে অপেক্ষা করলাম বেশ কিছুসময় দেখা তো পেলাম না হলাম ইভটিজিং এর শিকার। ব্যাচ শেষ করে তোমার মেসে গেলাম রাধুনি খালা জানালো সারাদিন বাসায় ফিরোনি দুপুরের খাবারও খাওনি, তারাও তোমাকে ফোন করে পায়নি কি হয়েছিলো তোমার? এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলা শেষ করলো কোন কথা বলার সুযোগ দেয়নি। ভালবাসার পরশে আবেগ ভরা কন্ঠে জিজ্ঞাসা খেয়েছো রাতে, গোসল করেছো? সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়ার পরেও তাহার কোন প্রকার রাগ কমছে না, অভিমানি ¯^রে শর্ত দেওয়া হলো। কোনকিছু না ভেবে সব কিছু মেনে নিলো সুজন, শর্তটি হলো যুথী সকালে মন্দিরে যাবে পূজা দিতে সাথে যেতে হবে তবে দেরী করা যাবে না যথাসময়ে, পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের বাহিরে অপেক্ষা করতে হবে। যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠার জন্য ফারজানাকে ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিলো সুজন, সকাল না হতেই প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে গেল কেউ ঘুম ভাঙিয়ে না দিলেও। সময় মতো যথাস্থানে এসে দেখতে পায় দূর থেকে একটা সাদা পরী ফুল হাতে সুজনের দিকে গিয়ে আসছে, কাছে এসেই ফুলের সাথে মিষ্টি হাসির মধ্য দিয়ে বিনিময় হলো সকালের শুভেচ্ছা। ফুলগুলো হাতে পাওয়ার পরেই ভালবাসার মানে খুঁজতে গিয়ে বাস্তব জগত থেকে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেল, সজ্ঞা ফিরে পেল দ্রুত মন্দিরে যাওয়ার তাগাদায়। দু’জনের গল্পের মধ্য দিয়ে আজ পূর্ব আকাশে সূর্য উকি দিয়েছে, তাদের পাদচারনায় ধন্য যেন পথের ধূলা বাতাসের সাথে হেসে সেটি জানান দিলো। তবে এসবকিছু ফারজানা একটু কিছুও জানতে পারে না, তবে সুজন ও যুথী কেউ কাউকে মনের ভাললাগার কথাটি জানাতে পারিনি। ধর্ম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুজনের কাছে অপরদিকে সহজে ধরা দিবে না সেই জেদ থেকে বলতে পারছে না যুথী। তথাপি তাদের দুটি মন ছুটছে একজন অন্যজনের দিকে অজানা এক আকর্ষনে। যতক্ষন পূজা শেষ না হলো ততক্ষন অপেক্ষায় থাকলো, মন্দির থেকে বের হয়ে ফুরফুরে মন নিয়ে দুজনে ঘুরে বেড়ালো দুপুর পর্যন্ত তারপর যে যার বাসায়। সেদিন বিকালে তারা আর বের হলো না তবে সামান্য কথা হয়েছে মোবাইলে।


অনেক ভাবনা চিন্তার মধ্যে দিয়ে রাত কাটালো সুজন সকালে ঘুম থেকে উঠে আজ আগে ফোন দিলো ফারজানাকে জানতে পারে হঠাৎ করে মায়ের জরুরী ফোনে বাড়ী যেতে হয়েছে বেশ কয়েকদিন বাড়ীতে থাকতে হবে কারণ মায়ের অবস্থা ্একটু খারাপ। জানিয়ে না যাওয়ার জন্য তার উপর একটু রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিলো, ফোন না রাখতেই আবার ফোন বাজলো জানতে পারলো সকাল ১০ টায় অথৈ প্রিÑক্যাডেট স্কুলের সামনে যেতে হবে সেখানে যুথীর বোনের মেয়ে পড়ে। তাকে মাঝে মাঝে আনা নেওয়া করতে হয়, তবে ইদানিং যান সব সময় সে বেশী খেয়াল করছে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, কেনাকাটা করতে যাওয়া, বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া তবে তার সাথে সুজনকেও দেখা যাচ্ছে। ফারজানা এসবের কিছুই জানেনা, ফারজানা বাড়ীতে জানার পরেই যুথী যেন আরও বেশী করে সুজনের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছে কোনমতে হাতছাড়া করতে চায়না তাই কাজে লাগাতে চায় সুযোগটাকে। সেদিন তারা বেশ অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি শেষে বাসায় ফিরলো ।
সুজনের নাটক মঞ্চায়ন বেশ সফলতার সাথে শেষ হলো এই সংবাদটি পাওয়ার পরে সবচেয়ে বেশী খুশী হয়েছিলো যুথী, মনে হলো এই নাটক তাদেরকে দূরে রেখেছিলো। এখন তারা কিছুটা মুক্তভাবে ঘুরতে পারে কারণে অকারণে বের হচ্ছে সন্ধ্যায়ও দুজনকে দেখা যাচ্ছে কফিশপে ব্যাচ ছাড়াও এভাবে বের হচ্ছে, কয়েকবার বাসায়ও নিয়েছে যুথী। বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে সংবাদ পেলো ফারজানা শহরে ফিরে এসেছে তার খুলনা আসার সংবাদে যুথীর উচ্ছাসে ভরা প্রাণে ভাটা পড়েছে তবুও লুকিয়ে চেষ্টা করছে আগের মতো চলতে সমর্থ্যনও পাচ্ছে সুজনের কাছ থেকে। রাত জেগে মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলছে সকলের অগোচরে, এসবের মাঝে না বলা ভালবাসার প্রমত্ত জোয়ারে ভাসছে দুজন।
অন্যদিনের মতো ¯^াভাবিক ছিলো না দিনটি, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন সাথে হালকা বৃষ্টি সকালে ঘুম থেকে উঠে মেসের বাজারের জন্য সুজন বেরিয়ে গেল, অর্ধেক বাজার শেষে ফোন পেলো মোটেও দেরী করা যাবে না যেভাবে আছে সেইভাবে আসতে হবে। কোনমতে বাজার শেষ করে ছুটলো প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দিকে সেখানেই অপেক্ষা করছে ফোনে নির্দেশনা দেয়া মানুষটি, সুজন পৌছানোর পরে দেখা গেল আকাশ মেঘলা থাকলেও তাদের কিছু যায় আসে না তাদের মুখে সোনালী রোদের ঝিলিক। যদিও দুজনের মুখে হাসি তবুও প্রকৃতিতে টুপটাপ বৃষ্টির সাথে হালকা শীতল হাওয়া বইছে দেওয়ালের কার্নিশের নিচে হেলান দিয়ে কোনমতে দাঁড়িয়ে চলছে প্রেম আলাপ। শুরুতেই ইনিয়ে বিনিয়ে শুরু করলেও কিছু সময় পরে ঝড়ের গতিতে চলতে থাকে হাসি গল্প, সময়ের সাথে পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। মূল কথার শুরুতেই বলে অনেক ভেবেছি আমি কয়েকদিন রাতের ঘুম হালকা হয়েছে কিছুতেই ভুলে থাকা সম্ভব নয় তোমার মতামতটি জানা খুবই প্রয়োজন আসলে ...আসলে আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি, জানিনা এটাকে তুমি কিভাবে গ্রহণ করবে। কথাগুলো বলার জন্য আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম কথার গতির সাথে পাল্লাদিয়ে বেড়েছে বৃষ্টির গতি ... কথাগুলো বলার পরে একটু মনভরে নিঃশ্বাস নিলো যুথী। কথাগুলো শুনে মোটেও হতভম্ব হয়নি বরং প্রত্যাশায় ছিলো সুজন, শুধু একটি কথা বের হলো দুজনের ধর্ম ভিন্ন যদি কোন বাধা আসে। প্রতিউত্তরটি যেন তৈরী ছিলো শীতল বাতাসের সাথে তরাঙ্গায়িত হয়ে কানে আসলো ”এসবের কিছু ভাবি নায় আর বুঝিও না ভাবতে চায়ও না”। কোন কথা না বলে নিরবে মেনে নিলো বলতে শুরু করলো তোমাকে আমি ফেরাতে পারতাম না কারণ আমিও তোমাকে ভালবাসি কিন্তু বলতে পারিনি ধর্মের বাধা আসবে বলে। তাহলে আমি যা ভেবেছি তাই হলো তবে বলে অট্টো হাসিতে মেতে উঠলো দুজন; সুখের জোয়ারে ভাসমান, বৃষ্টির হালকা ভেজা ঘাসে রোদের ঝিলিকের মত জ্বলজ্বল করে উঠলো মুখের হাসি। স্কুলের ছুটির পর যুথীর বোনের মেয়েকে সাথে নিয়ে সারাটা পথ হাসি খুশী আর গল্পে শেষ হলো। তাদের ভালবাসার প্রথম পথ চলা ছিলো গল্পে গল্পে ভরপুর, এভাবেই চলছে তাদের যুগলে পথ হাঁটা।
বেশ ভালই কাটছিলো তাদের সোনালী আভায় মোড়ানো দিনগুলি তবে মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান ঝগড়া তো আছেই লুকিয়ে মোবাইলে কথা বলা বেড়ছে একটু। বেশ কয়েকদিন পরেই তাদের ¯œাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে সবাই যে যার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ইতিমধ্যে রুটিন পেয়ে গিয়েছে ব্যাচ শেষ করে পার্কে আড্ডা জমে না, বাদাম, ফুচকার ¯^াদ প্রায় ভুলতে বসেছে। কথা না হওয়ায় দূরত্ব বেড়েই চলেছে ঝগড়ায় ভরে থাকছে কথা বলার সময়টুকু,ু মাঝে মাঝে দেখা করার জন্য বের হলেও ছোট ছোট বিষয় গুলো নিয়ে তর্কে লিপ্ত হচ্ছে সুজন ও যুথী। কোন কোনদিন তাদের সাথে থাকছে ফারজানা কিন্তু সে সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে বসে থাকে তবে উদয় হয় ঝগড়া মিটাতে এখনও পর্ষন্ত তাকে জানানো হয়নি বা কেউ জানায়নি তাদের মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক তৈরী হয়েছে, যা কিছু বোঝার নিজে থেকে বুঝে নিয়েছে ফারজানা। ফোনে কথা না বলতে পারাতে অভিমান করে থাকে সুজন আবার ফোন ব্যস্ত থাকলে চলে উত্তপÍ বাক্য বিনিময় যুথীও কোন অংশে কম নয় উদ্ভট সব প্রশ্ন করে উত্তরের প্রত্যাশা করে থাকে মনের মতো উত্তর না পেলে রাগ অভিমান করে থাকে, এমনকি ২/৩ দিন কথা না বলে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে। দোলাচলে চলতে চলতে শেষ করলো পরীক্ষা, এখন তাদের ব্যাচে দেখা হবে না কারণ তাদের বিভাগ আলাদা তাই নেই কোন বিষয়ে মিল এসব ভেবে মন খারাপ করে থাকে সুজন কেউ জিজ্ঞাসা করলে চুপচাপ থাকে। ব্যাচে দেখা হচ্ছে না আবার ঝগড়া চলমান থাকায় কিছুটা ভাটা পড়েছে তাদের সম্পর্কের মাঝে, ততোদিনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে ফারজানা সুজন থেকে। ফারজানাকে না জানিয়ে কদাচিৎ তারা বের হচ্ছে ভুলগুলো শুধরে নিতে কিন্তু অভিমানে কাটানো দিনগুলোর কথা উঠতেই আবার বেশ ভাল করেই জড়িয়ে যায় ঝগড়ায়। কারণ যুথী সবকিছু ¯^াভাবিক আচারণে প্রকাশ করতে চাইলো কিছুই যান হয়নি এটা সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারিনি, তার ¯^াভাবিক আচারণ সুজনকে বহুগুনে রাগিয়ে তুলেছে। রাগ করে কেউ কারও সাথে কথা না বলে দুজন দুই পথ ধরে ফিরে গেল বাসায়। অনেক কষ্ট যন্ত্রনা সহ্য করে দিন পার করলেও জিদের কাছে কেউ হার মানতে চায় না বলে আগে থেকে কেউ কাউকে ফোন দিচ্ছে না বা কথা বলছে না, একথা ফারজানা কোনভাবে জানতে পেরে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ফোন করে সুজনকে, একের পর এক প্রশ্ন করে কোন উত্তর না পাওয়ায় লাইন কেটে দেয় সে।


অতিবাহিত হলো ৭/৮ দিন হঠাৎ করে ম্যাসেজ আসে সুজনের মোবাইলে লেখা ছিলো শেষদিনের চলাফেরা বাসায় কেউ একজন জানিয়েছে যেটার কারণে যোগাযোগ করতে পারিনি এবং পরিস্থিতি কতোদিনে ¯^াভাবিক হবে সেটা জানা নেই। ম্যাসেজটি পাওয়ার পরে যোগাযোগের জন্য ফোন করেছিলো সুজন কিন্তু পারিনি কেন পারিনি সেটা আজও অজানা সুজনের। আরও কিছুদিন কেটে গেল যোগাযোগ বিহীন ফারজানার মাধ্যমে জানতে পারে সুজন, বাসায় শিক্ষক রেখে পড়ছে যুথী সাথে তাকেও যুক্ত করেছে বিস্তারিত ভাবে জানালো বেশ কিছুদিন হলো শিক্ষক রেখেছে বাসায় তবে সে যুক্ত হয়েছে ২/৩ দিন আগে। শিক্ষকের সাথে যুথীর কেমন কেমন ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কথাগুলো শোনার পরে নিজেকে সামলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফোন করে সুজন। ফোন রিসিভ হলো না থেমে থাকলো না সুজন বার বার চেষ্টা করতে থাকে মাঝ রাতে ওয়েটিং পাওয়া গেলে পাগলের মতো হয়ে সুজন বাসায় কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হয়ে গেল যুথীদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কুকুরের প্রচন্ড ডাকাডাকিতে বাসায় প্রবেশ করতে পারিনি সুজন একবুক হতাশাকে সঙ্গী করে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে লাগলো আর একের পর এক ফোন দিচ্ছে, প্রত্যেকবার ফোন ওয়েটিং পেলেও শেষবারে পাওয়া গেলো বন্ধ। উপায় না পেয়ে ম্যাসেজ করলো লেখাটি ছিলো ” সারা রাত ধরে বসে আছি তোমাদের বাসার পাশে, তোমাকে না দেখে এখান থেকে এক চুলও যাচ্ছি না”। বেশ সকালে ম্যাসেজটি দেখার পরে ছাদে উঠে আসে যুথী কারণ সে আগে থেকে তার জিদ সম্পর্কে অবগত, ছাদ থেকে নিচে নেমে ফোন করে ফিরে যেতে বলে এবং আরও জানায় আজ বিকালে তাদের দেখা হবে।
ক্লান্তি সবটুকু ভর করেছে চোখের পাতায় বাসায় ফিরে কাউকে কিছু না জানিয়ে গভীর ঘুমে হারিয়ে গেলো, দুপুরে গোসল সেরে খাওয়া শেষ করে বহুদিন পরে দেখা করার উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। হয়তোবা নতুন করে ভালবাসার মোড় ঘুরিয়ে চলবে হাজারো গল্পের বর্ণনা প্রত্যাশাটা একটু উকি দিলেও বিশ্বাস ছিলো ভরপুর। এক এক করে সময় পেরিয়ে গেলেও যার জন্য আসা তার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না অস্থির হয়ে উঠলো সুজন, বিকাল গড়িয়ে ঠিক সন্ধ্যা ছুই ছুই করছে এমন সময়ে দেখা গেলো মহারানীর। আজ তারা বসেছে মাঝখানে বেশ খানিকটা জায়গা রেখে অভিমান বজায় রেখে, কিছু সময় চলে যাওয়ার পরে ফোন বাজলো যুথীর অল্প সময়ে কথা শেষ করে পাশে বসা মানূষটির উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো হাতে সময় কম থাকায় তার আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কোন প্রকার কথা না বলে বাধা না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকলো, মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাসার দিকে পা বাড়ালো যুথী। নিজের সব ¯^প্ন আশাকে মাটি চাপা দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসার দিকে রওনা হলো সুজন, মাঝ রাতে মনকে বোঝাতে না পেরে ফোন করে কিন্তু যথারীতি ওয়েটিং পেয়ে ফারজানাকে ফোন করে। ফারজানা যে কথা গুলো শোনালো তার জন্য মোটেও প্রত্যাশিত ছিলো না জানতে পারে গৃহশিক্ষক সুজনকে দেখবে বলে বের হয়েছিলো। আরও জানায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা শর্তে সে বিষয়টা জানতে পারলেও সুজনকে জানাতে পারিনি, অনেক কষ্ট ঘৃনাকে সঙ্গী করে কাঁদতে কাঁদতে রাত পার করলেও সুজন ছন্নছাড়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ভোলার চেষ্টা করলেও মাঝে মাঝে একই কলেজে পড়ার সুবাদে পথিমধ্যে না চাইলেও তাদের দেখা হয়ে যায় কিন্তু কেউ কারও দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়নি বা খুঁজে পায় না। তাইতো সুজনের একটি কথা বলার ছিলো আজকের দিনে ঃ-






ভালবাসি শুধু বলা নয়,
ভালবাসা শুধু চাওয়া নয়,
ভালবাসা হলো অনুভব, মায়ার টান,
যেখানে সকল কষ্টের একটু শান্তির প্রলেপ মেলায়,
যে ভালবাসা শুধু শব্দের, অনুভবের নয়
ওটা ভালবাসা নয়,
ওখানে আমার সত্যিই আপত্তি আছে
ভালবাসা নাম দেওয়ার,
চারটি শব্দের অপমান হওয়ার

কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.