কিভাবে তিনি রেডিও প্রেমিক হলেন? - পার্বণ বার্তা



Image result for রেডিও

আজ থেকে বহু বছর আগে রুশ বেতার থেকে বাংলায় লেখা একটা চিঠি পেয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম। একজন রুশ নাগরিক বাংলা ভাষায় চিঠিটি লিখেছিলেন। গল্পটা এমন হতে পারে... একজন রুশ যুবক লেখাপড়া শেষে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।অনেক খোঁজাখুঁজির পর চাকরি না পেয়ে অন্য একটি বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করলেন।মনে করা যেতে পারে সেই বিদেশী ভাষাটি ছিল বাংলা। তারপর তিনি রুশ বেতারের বাংলা বিভাগের চাকরি পেলেন। অথবা এমনও হতে পারে, তিনি রুশ বেতারে চাকরি করতেন।রুশ বেতার যখন বাংলা ভাষায় সংবাদ প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিলে তখনই তাকে বাংলা ভাষা শেখার জন্য উৎসাহিত করা হলো। ঘটনা যেভাবেই ঘটুক, রুশ ভদ্রলোক বাংলা ভাষা শেখার সাথে সাথে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ,সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিলেন।এ বিষয়টি সিরাজুল ইসলামকে আজও রোমাঞ্চিত করে। বলে রাখা ভালো, সেই চিঠিটি আজও সিরাজুল ইসলাম সযত্নে সংগ্রহ করে রেখেছে। ২০১৫ সালে ভয়েস অফ আমেরিকা এর ফ্যান ক্লাবের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শ্রোতাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের চিঠি লিখে সিরাজুল ইসলাম প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।পুরস্কারস্বরূপ একটি ক্রেস্ট এবং একটি হাতঘড়ি উপহার পেয়েছিলেন। হাত ঘড়িটি আজও তার হাতে শোভা পাচ্ছে। কথায় কথায় তিনি বলছিলেন, চীনা বেতার থেকে যখন ভিন্ন ভিন্ন রকমের উপহার আসত ;কখনো চীনা ক্যালেন্ডার, কখনো পরার গেঞ্জি অথবা অন্যান্য উপহার পেয়েছেন তখন আনন্দে অভিভূত হয়ে যেতেন। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের একসময়ের প্রধান রোকেয়া হায়দারের সাথে যখন ঢাকায় তার দেখা হয়েছিল; সেই স্মৃতিকে তিনি জীবনের এক অমূল্য স্মৃতি বলে বিবেচনা করেন। এর শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে।অষ্টম শ্রেণি থেকে পড়া অবস্থায় তিনি বেতার অনুষ্ঠান শুনতেন, বেতারের খবর শুনতেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন চিঠিপত্র লেখালেখি করতেন।সেইসব চিঠির জবাব আসতো; কখনো কখনো উপহারও আসতো। সেই কৈশোরের দিনগুলি থেকেই বেতারের সাথে এক অদৃশ্য ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হলেন সিরাজুল ইসলাম। ছোটবেলায় বাবাকে দেখতেন রেডিওর খবর এবং অনুষ্ঠান শুনতে। বাবা সংবাদপত্র পাঠ করতেন।এসব দেখে রেডিও শিল্পীদের প্রতি এক ধরনের অনুরাগ তৈরি হয় সিরাজুল ইসলামের। তিনি ডাকটিকিট সংগ্রহ করতেন। সাপ্তাহিক এবং মাসিক ম্যাগাজিন পত্রিকা পড়তেন এবং সংগ্রহে রাখতেন। এসবের অনেক কিছুই আজও তার সংগ্রহে আছে। ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি বাংলা, ডয়েচসেভেলে জার্মান, রেডিও তেহরান ,সৌদিয়া রেডিও, আকাশবাণী কলকাতা, রেডিও চায়না ... এসব পৃথিবী বিখ্যাত রেডিও স্টেশনের সাথে সিরাজুল ইসলামের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। খুব সহজেই এই গল্প গুলো হয়তো বলা হয়ে উঠল। তথাপি, গত ৪৫ বছরের এসমস্ত মিষ্টি মধুর স্মৃতি সামান্য কথায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমাদের ছোটবেলায় রেডিওর খুব চল ছিল। আমরা রেডিও শুনতাম। রেডিওতে খবর শোনা এবং অনুষ্ঠান শোনার সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা আজকের দুনিয়ায় পুরনো হয়ে গেছে।
সে সময় রেডিওতে খবর শুনে মানুষ সুন্দর করে কথা বলা শিখেছে। মানুষ গান শোনার মানসিকতা তৈরি করতে পেরেছে। জীবনকে সুন্দর করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনেছে।যারা রেডিওতে গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছে তাদের রুচিবোধ, উন্নত শিল্পবোধ আজও আমাদের মুগ্ধ করে। একদা রেডিও মানুষকে শিক্ষিত করেছে, সভ্য করেছে, সংস্কৃতিবান করেছে। তাদের কেউ কেউ আবার সিরাজুল ইসলামের মতো হয়ে গেছেন। এখনো তিনি খুলনা বেতার এ কাজ করেন।সংবাদ পাঠ করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করা এখনও তার জন্য অফুরন্ত আনন্দের উৎস। ------অসংখ্য মানুষের এই একই রকম স্মৃতি হয়েছে রেডিওকে ঘিরে। ------ রেডিও এখনো টিকে আছে। কিন্তু সেই সব দিনগুলো আর নেই। আমরা যা কিছু পেছনে ফেলে আসি, তার সবই আসলে খারাপ ছিল না। মোঃ সিরাজুল ইসলাম ,
সহযোগী অধ্যাপক ,
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ ,
সরকারি বি এল কলেজ খুলনা।

কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.