৩৯৬ দিন... সাখাওয়াত সৌখিন

১ম পর্ব............
রোহানের ব্রেকআপের পর বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় দিয়ে কিছুটা নিজেকে সামলে নিয়েছে। নিজের ভিতর অনেকটা স্বাভাবিকতা কাজ করতে শুরু করেছে কিন্তু মাঝে মাঝে তার সাবেক গার্লফ্রেন্ডকে খুবই মিস করে। যখন বন্ধুদের সাথে থাকে তখন খুব একটা মনে না পড়লেও যখন একা একা থাকে তখন খুবই মনে পড়ে তার হারানো স্মৃতিগুলোকে। তার আজকে খুবই মন খারাপ। তার মন চাচ্ছে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে। কিন্তু তার বন্ধুরা যেতে পারবে না বলে সেও যেতে পারতেছে না। অনেক মন খারাপ লাগতেছে তাই সে ফেইসবুকে একটু ঢুঁ মারলো। নিউজফিড দেখতে দেখতে হঠাৎ করে সামনে পড়ে বরিশালের একটা গ্রুপের ট্যুর ইভেন্ট। বরিশালে নতুন একটা আধুনিক লঞ্চ তৈরি করেছেন। সেটার শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে লঞ্চ কোম্পানি ১০ ঘণ্টার একটা ট্যুর আয়োজন করেছে। সেই ইভেন্টের নিউজটা ওর চোখে পড়ে। নিউজটা ছিল এই রকম- “মাত্র ৫০০ টাকায় ঘুরে আসুন সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের সাথে সুন্দরবন। শর্ত প্রযোজ্য।” মানে শর্ত হলো কাপল হতে হবে।
এই ইভেন্টের নিউজটায় রোহান একটা স্যাড রিয়েক্ট দেয় এবং কমেন্ট করে। কমেন্টটা ছিল- “আজ সিঙ্গেল বলে!”
সাথে সাথেই এই কমেন্টে একটা স্যাড রিয়েক্ট আসে। রিয়েক্টটা আসে ভিন্ন ধরণের নামের আইডি থেকে। সেখানে সে কমেন্টের রিপ্লাই দেয়- “সবকিছুই বিধাতার ইশারায় চলে!!..” যখন এই রিপ্লাইটা দেয় তখন সেটা দেখার আগেই রোহান ফেইসবুক থেকে বের হয়ে যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় সে আবার ফেইসবুকে আসে এবং নটিফিকেশন দেখে। সেখানে রিপ্লাইটা দেখে সে ভাবে কে এই লোকটা। রোহান রিপ্লাই দেয়- “হুম সব বিধাতার ইশারায় চলে কিন্তু মানুষের ইচ্ছাটাও খুব প্রয়োজন।”
সাথে সাথেই এই কমেন্টে একটা স্যাড রিয়েক্ট আসে। রিয়েক্টটা আসে ভিন্ন ধরণের নামের আইডি থেকে। সেখানে সে কমেন্টের রিপ্লাই দেয়- “সবকিছুই বিধাতার ইশারায় চলে!!..” যখন এই রিপ্লাইটা দেয় তখন সেটা দেখার আগেই রোহান ফেইসবুক থেকে বের হয়ে যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় সে আবার ফেইসবুকে আসে এবং নটিফিকেশন দেখে। সেখানে রিপ্লাইটা দেখে সে ভাবে কে এই লোকটা। রোহান রিপ্লাই দেয়- “হুম সব বিধাতার ইশারায় চলে কিন্তু মানুষের ইচ্ছাটাও খুব প্রয়োজন।”
এই রিপ্লাইটা দেখার পর মেয়েটা অনেক কাঁদে আর নিজে নিজে ভাবে আমার ইচ্ছার তো কোনো কমতি ছিল না। প্রেম ভালোবাসার তো কোনো ধরণেরই কমতি ছিল না। তারপরও আমার জীবনটা এমন হলো কেন? আমি কি দোষ করেছিলাম যার কারণে আমার সাথে এমনটা করা হলো। এগুলো ভাবে আর অনেক কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে কমেন্টের রিপ্লাই দেয়-"প্রেম,ভালোবাসা, ইচ্ছা এগুলোর কোনোটারই অভাব ছিল না।" এর সাথে কতগুলো স্যাড ইমোজি দিয়ে দেয়।
ও আচ্ছা এখনো মেয়েটার পরিচয় দেয়া হয়নি। মেয়েটার নাম তরী। তরী এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পায়নি বলে তার পরিবার থেকে তাকে অনেক বকা দিয়েছে তাই সে রাগ করে তার খালার বাসায় থাকে। এ+ না পাওয়ার পিছনে তরী নিজেই দায়ী কারণ সে যখন ইন্টারে কলেজে ভর্তি হতে যায় তখন ঐ কলেজেরই এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় ভর্তি কার্যক্রম তারাতারি করতে পারে এবং তার ফোন নাম্বার নিয়ে আসে কলেজের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে কথা হয়। পরে যেদিন ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হবে সেদিন সকালেই তাকে কল দিয়ে তারাতারি কলেজে আসতে বলে। সেদিন থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে প্রেম, ভালোবাসা আরও যা কিছু সম্ভব সব তারা করে। তাদের প্রেমের কারণে কলেজের বড় ভাইটাও এ+ পায়নি। এমনকি মেডিকেল তো দূরের কথা কোনো পাবলিক ভার্সিটিতেও চান্স পায়নি। তারপর ঢাকার ভালো একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে সেখানে চলে যায়। সেখানে গিয়ে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে যায়। তারপর থেকে তরীর লেখাপড়াও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। পরিণতিতে যা হবার সেটাই হলো। এখন খালার বাসায় থেকে ভার্সিটি কোচিং করে।
রোহান কমেন্টের রিপ্লাই দেখে কৌতূহল জাগলো আসলে মেয়েটা কে? নাম দেখে ধারণা করে নিয়েছে এটা মেয়েই হবে। সে আর কোনো কমেন্টের রিপ্লাই দিল না। শুধু একটা স্যাড রিয়েক্ট দিল আর ভাবতে লাগলো মানুষের জিবনের সাথে অন্য মানুষের জিবনের কাহিনী মিলে যেতে পারে! মানুষ মানুষকে কেন কষ্ট দেয়? কষ্ট দিয়ে তারা কি লাভ পায়? কেন মানুষ মানুষের মনকে বোঝে না? এরকম অনেক প্রশ্ন মনে জাগে আর ভাবে পৃথিবীটা এভাবে কেন? এভাবে অনেক কিছু ভাবে আর ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে চোখ থেকে কখন যে পানি বের হয়ে যায় টেরই পায় না। এর মধ্যে তার পুরনো সেই ৬ বছরের প্রেমের হাজারো স্মৃতির মধ্যে একটি স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। দুপুরের রোদে এক ছাতার নিচে ব্রীজের উপরে দাঁড়িয়ে তার হারানো ভালোবাসার সাথে হাজারো স্বপ্নের কথা মনে পড়ে। দুজনে কত স্বপ্নই না দেখেছিল। দুজনে চাকরি করবে, বিয়ে করবে, তাদের অনেক সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে। এমন কি মেয়ের নামও ঠিক করেছিল। দুজনার নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখবে- "রোহী" (রোহান=রো, হীরা=হী)। এসব ভাবতেছে ভাবতেছে হঠাৎ একটা ম্যাসেজ রিকুয়েস্ট এলো।
---- ঘুমিয়ে পড়েছেন?
---- না, আমার ঘুমাতে অনেক দেরি হয়। আপনি কে আপনাকে তো চিনতে পারলাম না?
---- আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনি ট্যুরে যাবেন?
---- আমি তো বিয়ে করিনি; তো যাবো কিভাবে?
---- আপনার সাথে আমি যাবো; চলেন যাই। আমার খুব যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না।
---- কাউকে পাচ্ছেন না তাই বলে আমার সাথে যাবেন?
---- হ্যা যাবো; আপনার কোনো সমস্যা?
---- না মানে ব্যাপারটা কেমন না!?
---- যেমনই হোক আপনি গেলে আমিও যেতাম আরকি!
---- আচ্ছা আজকেই তো রেজিঃ এর শেষ দিন?
---- হ্যাঁ রাত ১২ টা পর্যন্ত।
---- আচ্ছা আপনাকে জানাচ্ছি।
---- না, আমার ঘুমাতে অনেক দেরি হয়। আপনি কে আপনাকে তো চিনতে পারলাম না?
---- আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনি ট্যুরে যাবেন?
---- আমি তো বিয়ে করিনি; তো যাবো কিভাবে?
---- আপনার সাথে আমি যাবো; চলেন যাই। আমার খুব যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না।
---- কাউকে পাচ্ছেন না তাই বলে আমার সাথে যাবেন?
---- হ্যা যাবো; আপনার কোনো সমস্যা?
---- না মানে ব্যাপারটা কেমন না!?
---- যেমনই হোক আপনি গেলে আমিও যেতাম আরকি!
---- আচ্ছা আজকেই তো রেজিঃ এর শেষ দিন?
---- হ্যাঁ রাত ১২ টা পর্যন্ত।
---- আচ্ছা আপনাকে জানাচ্ছি।
কোন মন্তব্য নেই