ঋণের হতাশায় হারিয়ে যাওয়া অতীত।

রহিম গ্রামে বসবাস, মধ্য বয়সী ৩/৪ জনের সংসারটা তার আয়ে চলে কোন মতে। পড়াশুনা
খুব বেশি দূর করতে পারে নি সংসারের অভাবের কারনে । হটাত তার
বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের হাল তাকেই ধরতে হয়। গ্রামের
এক মহাজনের মাধ্যমে জানতে পারে বিদেশে জনবল নিচ্ছে কম টাকায়। তবে সুবিধা
হল টাকা একে বারে নয় কিস্তিতে দিতে হবে। এই সুযোগ
টা রহিম নিতে চাই সংসারের কথা মাথায় রেখে। সে চিন্তা
ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশ
যাবে। অনেক কস্তে মাকে বুঝিয়েছে সে। এখন চিন্তা
হল যাওয়ার টাকা কিভাবে জোগাড় করবে। মার সাথে অনেকবার আলোচনা করেও বুঝতে পারছে না কিভাবে টাকা জোগাড়
করবে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিল প্রথম কিস্তির টাকাটা সে তার বাড়ীর
৩ টা গরু ছিল সেটায় বিক্রি করে দিবে এবং সেই টাকা সে জমা দিবে। কথা ছিল
প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেয়ার ২ মাসের মধ্যে বিদেশ নিয়ে যাবে। প্রথম কিস্তির
২ লাখ টাকা জমা দেয়ার কয়েকদিন পরে আবার ১০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে মহাজন। কিজন্য
টাকা লাগবে শুনতে গেলে কাগজ পত্র পাঠানো, ফাইল তৈরি করা এসব কথা বলে টাকা নেয়। রহিম ধার
করে টাকাটা জমা দেয় কারন সেতা খুবেই জরুরি ছিল। দেখতে দেখতে
১ মাস চলে যায়, যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে রহিম কে বিভিন্ন
কথা বলে বুঝিয়ে রাখে। আরও একটা কথা জোর করে বলে রাখে বিদেশ যাওয়ার কথা যান কাউকে না
বলে। কারন সবাই জানলে নাকি সমস্যা করতে পারে, এবং একই সাথে বলে রাখে ২য় কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য । রহিম মায়ের
সাথে কথা বলে বসত বাড়ীর অর্ধেক বিক্রি করে দেয়। সেই টাকা
সে তুলে দেয় বিদেশ যাওয়ার জন্য মহাজনের হাতে। দেখতে দেখতে
২ মাস শেষ হয়ে গেল কিন্তু যাওয়ার কথা বললে মহাজন বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে। আর ও টাকা
বেশি লাগবে বলে জানিয়ে রাখে রহিমকে। রহিম টাকার কথা শুনে মন খারাপ করে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে থাকে। অনেক কষ্টে
মহাজনকে বুঝিয়ে বিদেশ গিয়ে শোধ দিবে বলে জানায়। এদিকে দিনের
পর দিন পেরিয়ে গেলেও রহিমকে নেয়ার কোন কথা মহাজন বলে না। মহাজনের
সাথে দেন দরবার করে অবশেষে রহিমকে নিতে রাজি হয় তবে শর্ত দেয় আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি
দিতে হবে। রহিম ভেবে চিন্তে রাজি হয়ে যায় উপায় না পেয়ে, বিসয়তা কাউকে জানাতেও পারছে না। একদিন রাতে
মহাজন তাকে জানায় সকালেই থাকে বাড়ি থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য বিদায় নিতে হবে অনেক কষ্টে
তার জন্য একটা বাবস্থা করেছে। রহিম মহাজনের কথা মত সকালেই মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিদেশে
যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ঢাকায় রহিমকে ২ দিনের ট্রেনিং করতে হবে তারপর তাকে বিদেশ যাওয়ার
অনুমতি দিবে। কথামত রহিম ট্রানিং করতে রাজি হল। ১ম দিন
কাজের ট্রানিং হলেও ২য় দিন তাদের কিভাবে যেতে হবে, কোথায় কোথায় থাকতে
হবে এসব বিষয় বলা হচ্ছে। রহিম
যাওয়ার মাধ্যম শোনার পর তার মাথাই আকাশ ভেগে পড়ল। তারা ছিল
দলে ৮/১০ জন তাদের সাথে অন্য জায়গা থেকে যুক্ত হবে আরও ১৫ জনের মত। এভাবেই
তারা ৫০/৬০ জনের একটি দল রওনা হবে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশে। তাদের যেতে
হবে নদী পথে কয়েক রাত কাটাতে হবে গহীন বনের মধ্যে তারপর কোন এক মাঝ রাতে তারা ইঞ্জিন
চালিত নৌকায় করে রওনা হবে তাদের কাঙ্ক্ষিত দেশের উদ্দেশে। পথিমধ্যে
তাদের দুই বেলা খাবার দেয়া হবে সারাদিনের জন্য ১ লিটার পানি পাবে। এসব কথা
গোপনে রহিম শুনে ফেলে। রহিম বিষয়টা কয়েকজন সঙ্গীর সাথে আলোচনা করে, একেই সাথে মায়ের সাথে কান্নাকাটি করে। অনেক ভেবে
চিন্তে কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা এভাবে যাবে না। ৮/১০ জনের একটা দল ওই দল থেকে পালিয়ে আসে। রহিম ৭/৮ দিন পর লুকিয়ে বাড়িতে আসে , ধীরে ধীরে সে আরও বেশি
ঋণের চাপে পরে যায় । ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে একদিন রাতে বাবা,মাকে নিয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে সকলের অজান্তে হারিয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই