একটি ঝড়ের সকাল
একটি ঝড়ের সকাল

সাহিত্য পার্বণঃ
একটি ঝড়ের সকাল
রাত ৩ টা পর্যন্ত ফেইসবুকিং করে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাত বিকট শব্দ শোনে ঘুম ভাঙ্ল। ঘুম থেকে ওঠে জানালা খোলে বাহিরে তাকিয়ে দেখি প্রচন্ড বাতাস। ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মনে মনে একটু খুশি হলাম। যাক বাবা আজ আর কোচিংয়ে যেতে হবে না। আমি ইউনিভারসিটির ৪র্থ বর্ষের ছাত্র, একটা একাডেমিক কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেই আর টিউশন করে পড়াশোনা চালাচ্ছি। বাথ রোমের খোলা দরজার বিকট শব্দ পেয়েই আমার ঘুম ভাঙ্গল। দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম, মেঘলা আকাশ। প্রচন্ড বাতাসে বেলকনিতে দাড়িয়ে মেঘের খেলা দেখছি। হঠাত ধমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ফোটা গায়ে স্পর্শ করছে। ইচ্ছে করছিল বৃষ্টিতে ভেজার কিন্ত চোখে ঘুমের খুব অভাব তাই আবার শুয়ে পড়লাম। তখন ছিল ভোর সারে পাচটা।
আবারও ঘুম ভাঙল। দরজার বিকট শব্দে নয়। অ্যালার্ম এর ক্রিং ক্রিং শব্দে। ঘড়িতে ৬:৪৫। জানলা খোলে বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি নেই, হালকা মিষ্টি রোদ। তারাতারি করে রেডি হয়ে কোচিংয়ে চলে গেলাম। প্রথম ক্লাসটা শেষ করেই দেখি আকাশ আবারো কালো হয়ে গেছে, মেঘেরা ছোটাছোটি করছে এদিক ওদিক। কালবৈশাখী না আসতেই যেন কালবৈশাখীর রূপবৈচিত্র দেখা যাচ্ছে। যাইহোক ছাত্র/ছত্রীদের ছুটি দিয়ে দিলাম প্রধান কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে। আকাশের কালো মেঘের কারনে হালকা অন্ধকার রাস্তা দিয়ে হাটছি বাসার উদ্দ্যেশ্যে। বাসা থেকে কোচিংয়ের দূরত্ব ১০ মিনিটের পথ। মাঝখানে একটা মহিলা কলেজ। অনেক ছাত্রীরা অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে কলেজে যাচ্ছে। ওদের কেউ কেউ হালকা বাতাস এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগোলোকে শাসন করছে।
আমি বুঝতে পারেছিলাম ঝড় আসবে একটু পরেই। যেই ভাবা সেই কাজ। ধমকা বাতাস শুরু হল সেই সাথে অজর বৃষ্টি। এক নিমিষে ভিজিয়ে দিল পুরা শরীর। আমি দৌড়ে কোন রকম একটা অর্ধসমাপ্ত ঘরে গিয়ে উঠি। হয়ত কোন কনফেকশনারী দোকান করার জন্য ঘরটি করা। আমার পিছনে পিছনে সাদা রংয়ের ইউনিফর্ম পড়া একটা মেয়ে এসে ডুকল। দুজন দু পাশে দাড়িয়ে রইলাম অনেক্ষণ। কেউ কারো সাথে কোন কথা বলছি না। আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছি কিছু একটা বলার কিন্তু বলতে পারছিলাম না।
বৃষ্টি আরো বাড়তে লাগল সেই সাথে বাতাসও কম নয়। চারদিক অন্ধকার হতে লাগল। মেয়েটা কয়েকবার আড়চুখে তাকিয়েছিল আমার দিকে। মেয়েটা দেখতে এক কথাই খুবই সাধারণ যার কোন বর্ণনা দেওয়া যায় না। আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম।
-ভয় পাচ্ছেন?
- মেয়েটা কোন কথা বলল না।
-দেখুন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি মানুষ, কোন হিংস্র প্রাণী নয়।
- আচ্ছা আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমি ভয় পাচ্ছি।
- আপনি ত এটাও বলেন নি যে ভয় পাচ্ছেন না।
- হোম। দেখুন শহরে পড়াশোনা করলেও আমি গ্রামের মেয়ে। সুতরাং ঝড়- বৃষ্টি আমাকে কাবু করতে পরবে না। ছোটবেলা থেকেই ঝড়- বৃষ্টির মধ্যেই বড় হয়েছি। জানেন আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন একদিন স্কুল ছুটি হল, বাড়ি ফিরছি। মাঝ পথে আসতেই বিরাট ঝড় শুরু হল। সেই সাথে ঝুৃম বৃষ্টি। বাতাসে কে কেথায় গেছে কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছে না। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন আমার এক বান্ধবী খুব চিকনা ছিল। ওকে বাতাসে এক ধাক্কায় খালে ফেলে দিল। কেউ ওকে খাল থেকে তুলতে সাহস পাচ্ছিল না। আমি সাহস করে তুলে ঝড়ের ভিতরেই ওকে বাড়িতে পৌছে দেই......
আমি বুঝতে পারেছিলাম ঝড় আসবে একটু পরেই। যেই ভাবা সেই কাজ। ধমকা বাতাস শুরু হল সেই সাথে অজর বৃষ্টি। এক নিমিষে ভিজিয়ে দিল পুরা শরীর। আমি দৌড়ে কোন রকম একটা অর্ধসমাপ্ত ঘরে গিয়ে উঠি। হয়ত কোন কনফেকশনারী দোকান করার জন্য ঘরটি করা। আমার পিছনে পিছনে সাদা রংয়ের ইউনিফর্ম পড়া একটা মেয়ে এসে ডুকল। দুজন দু পাশে দাড়িয়ে রইলাম অনেক্ষণ। কেউ কারো সাথে কোন কথা বলছি না। আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছি কিছু একটা বলার কিন্তু বলতে পারছিলাম না।
বৃষ্টি আরো বাড়তে লাগল সেই সাথে বাতাসও কম নয়। চারদিক অন্ধকার হতে লাগল। মেয়েটা কয়েকবার আড়চুখে তাকিয়েছিল আমার দিকে। মেয়েটা দেখতে এক কথাই খুবই সাধারণ যার কোন বর্ণনা দেওয়া যায় না। আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম।
-ভয় পাচ্ছেন?
- মেয়েটা কোন কথা বলল না।
-দেখুন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি মানুষ, কোন হিংস্র প্রাণী নয়।
- আচ্ছা আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমি ভয় পাচ্ছি।
- আপনি ত এটাও বলেন নি যে ভয় পাচ্ছেন না।
- হোম। দেখুন শহরে পড়াশোনা করলেও আমি গ্রামের মেয়ে। সুতরাং ঝড়- বৃষ্টি আমাকে কাবু করতে পরবে না। ছোটবেলা থেকেই ঝড়- বৃষ্টির মধ্যেই বড় হয়েছি। জানেন আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন একদিন স্কুল ছুটি হল, বাড়ি ফিরছি। মাঝ পথে আসতেই বিরাট ঝড় শুরু হল। সেই সাথে ঝুৃম বৃষ্টি। বাতাসে কে কেথায় গেছে কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছে না। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন আমার এক বান্ধবী খুব চিকনা ছিল। ওকে বাতাসে এক ধাক্কায় খালে ফেলে দিল। কেউ ওকে খাল থেকে তুলতে সাহস পাচ্ছিল না। আমি সাহস করে তুলে ঝড়ের ভিতরেই ওকে বাড়িতে পৌছে দেই......
মেয়েটা বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে আর আমি অবাক নয়নে মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছি। বৃষ্টি আরো বাড়তে লাগল এর সাথে সাথে শিলা পড়ছে।
- এই দেখুন। কি সুন্দর শিলা পড়ছে।
- হোম
- আমাকে কয়েকটা শিলা কুড়িয়ে দেন না প্লিজ।
- পাগল নাকি। এগুলো মাথাই পড়লে কি হবে জানেন আপনি?
- কিচ্ছু হবে না। আমি ছোটবেলায় অনেক কুড়িয়েছি।
আমি বোকার মত মেয়েটার কথা শোনে শিলা কুড়িয়ে হাতে দিলাম। এভাবে অনেক্ষণ আমাদের খোশগল্প চলতে থাকে।
- এই দেখুন। কি সুন্দর শিলা পড়ছে।
- হোম
- আমাকে কয়েকটা শিলা কুড়িয়ে দেন না প্লিজ।
- পাগল নাকি। এগুলো মাথাই পড়লে কি হবে জানেন আপনি?
- কিচ্ছু হবে না। আমি ছোটবেলায় অনেক কুড়িয়েছি।
আমি বোকার মত মেয়েটার কথা শোনে শিলা কুড়িয়ে হাতে দিলাম। এভাবে অনেক্ষণ আমাদের খোশগল্প চলতে থাকে।
একসময় বৃষ্টি থেমে গেল, প্রকৃতি রোদের আলোয় আলোকিত হতে লাগল। মেয়েটাও চলে গেল। সবচেয়ে আশ্চর্য মেয়েটা কোথায় থাকে, নাম কি কিছুই জানা হয়নি। আমি কলেজের আশেপাশে খুজেছি অনেকদিন কিন্তু পাইনি।
কোন মন্তব্য নেই