অবশেষে পুলিশেই স্বস্তি .
পার্বণ ডেস্কঃ
রাত্রী তখন সাড়ে দশটা। আমি নামুজা রোড হয়ে বারপুর,উপশহর পার হয়ে থানার দিকে আসছিলাম। করোনার কারনে চারিদিক ধুঁধুঁ করছে। রাস্তার মোড়ে পুলিশ ছাড়া জনমানব শূন্য। হঠাৎ হাকিড় মোড় পার হতেই একটা অতি পুরাতন ছোট্র মোটর সাইকেল ফটফট শব্দে আমার গাড়ি পার হওয়ার চেস্টা করছিল। আমার মোবাইল-১ নাইট ডিউটি। আমি মোটর সাইকেলটি থামালাম। এত্ত রাতে বের হয়েছেন কেন?
- স্যার, আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা। কোন দিকেই কোন মোড়েই গাড়ী পাচ্ছি না। রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি কিছুই নাই। আমার স্ত্রী মারা যাবে স্যার। আমার বাচ্চার কি হবে জানি না। পানি ভাঙছে কিন্তু গাড়ির কারনে হাসপাতালে নিতে পারছি না। বললেন কারেন্ট মিস্ত্রি আল আমিন।
আমি ওর কান্না দেখে নিজেও ঠিক থাকতে পারলাম না। আমি সফট মাইন্ডের মানুষ। কিভাবে সহযোগিতা করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। পাশের মোড়ে নিজে গাড়ি নিয়ে দেখে আসলাম সেখানেও কোন গাড়ি নাই। আমি রাতে ডিউটি করলেও আমাকে আর আমার গাড়ি নিয়ন্ত্রনকারী অফিসার আছেন। আমি বিষয়টি আমার অফিসার ইনচার্জ জনাব এসএম বদিউজ্জামান স্যারকে বললে স্যার আমার গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠাতে বলেন। আমি স্বস্তির এক বিশাল বড় নিশ্বাস ফেলি। আমি আলামিনকে বলি ওর স্ত্রীকে আনতে। আলামিন তার স্ত্রী বৃষ্টিকে নিয়ে দুজন মহিলা সহ আমার গাড়িতে উঠে। গাড়িতে উঠতে সহায়তা করেন আমার সাথে থাকা তিনজন পুলিশ লাইন্সের ফোর্স। গাড়িতে যেন ঝাঁকি না লাগে সেদিকে খেয়াল রেখে আস্তে আস্তে ভাল রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দিলে ভালভাবে গাড়ি চালান ড্রাইভার সোয়বুর। আমি ওদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়ায় পৌছে দিই। আলামিনের কান্না আমাকে আবেগ তাড়িত করে তোলে। পরে প্রসব বেদনা উঠা বৃষ্টির কান্না দেখে আমিও ভেঙে পড়ি। ওদের হাসপাতালে নামিয়ে দিলে আমাকে ধরে আলামিন হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
আলামিন বলল
" স্যার! আমি তো পুলিশ দেখে ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। অবশেষে পুলিশেই স্বস্তি পেলাম। "
আমার বগুড়া সদর থানায় চাকরির সুবাদে হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, ইমার্জেন্সি হাসপাতালে ভাল সম্পর্ক। সেখানে ভর্তি করে রেখে আসি।
আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে আলামিন জড়িয়ে যে পরিমান দোয়া করেছে আমি করোনার ভয়, রোগের ভয় সবকিছু ভুলে গেছি। আল্লাহ তাদের সহায় হোন। খোঁজখবর রাখছি এখনও ভাল আছে।
শুনলাম আলামিনের ছেলে বাচ্চা হবে। শুভ কামনা থাকবে। এরকম সহযোগিতা করতে পেরে ওদের সাথে আমারও চোখে জল এসেছিল। ওদের জন্য দোয়া করবেন।
শুনলাম আলামিনের ছেলে পৃথিবীর আলো দেখেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই