আসুন গল্প করি..... জীবনের গল্প....চঞ্চল চৌধুরী ।
আসুন গল্প করি.....জীবনের গল্প....চঞ্চল চৌধুরী

পার্বণ ডেস্কঃ
...................
খুব সাধারন একটা ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে আমার বসবাস।
সাধারন বলছি একারনে,আমার জীবন যাপন সম্পর্কে অনেকের খুব উচ্চ ধারনা রয়েছে।
ধারনাটা ঠিক নয়।
ছবিতে আমার ছোট্ট ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমের ছোট্ট একটা কোনা।
এক মাসের বেশী সময় ধরে, দিন রাতের অধিকাংশ সময় আমার এখানেই কাটে।
এই একমাস ধরে ফেসবুকে আমার যত চেঁচামিচি শুনেছেন,সেটা হোক আমার গান বা লেখালেখি অথবা আমার তৈরী ভিডিও ফুটেজ....
সব এখানে বসেই করা।
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন....
একটা ল্যাপটপ,একটা ট্রাইপড,একটা স্কেল চেঞ্জার হারমোনিয়াম,একটা ছোট স্পীকার,মোবাইল ফোন,একটা আরাম চেয়ার ইত্যাদি ।
পনেরো বছর আগে,নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের কল্যাণে,জীবনের প্রথম বিদেশ সফর করেছিলাম মঞ্চনাটক “চে’র সাইকেল” নিয়ে।
দেশটা ছিল হংকং।
অনেক কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে একটা হ্যান্ডিক্যাম ( ভিডিও ক্যামেরা ) কিনতেই টাকা শেষ।
তখন মামুন ভাই আমাকে এই ট্রাইপড টা কিনে দিয়েছিলেন।
গত পনেরো বছরে ট্রাইপড টা ব্যবহার করা হয়নি।
যে কোন ভিডিও ধারনে এখন এই ট্রাইপড টা খুব কাজে লাগছে।
ফেলে রাখা কোন জিনিসের প্রয়োজনই কখনও শেষ হয় না।
এত বছর পর,এই ট্রাইপডটা আমার কাজের জন্য একেবারে অপরিহার্য হয়ে গেছে।
ধন্যবাদ গুরু মামুনুর রশীদ।
ল্যাপটপ টা বেশ কয়েক বছর আগে নিউ ইয়র্ক থেকে কিনেছিলাম।একটা আমার,একটা বৃন্দাবন দার।
আমার ল্যাপটপ খুব বেশী ব্যবহার করা হতো না।এখন এটাও আমার নিত্য সঙ্গী।
চারুকলায় অনার্স শেষ করবার পর,কিছুদিন নিজে নিজেই গ্রাফিক ডিজাইন শিখেছিলাম।গত একমাসে আবার নতুন করে গ্রাফিক্স এর কাজ করছি নিয়মিত।
রং তুলির অভাবে,গ্রাফিক্সের মাধ্যমে কিছু প্রোট্রেটের কাজও করছি।
সবচেয়ে বড় কথা,ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসলে,সময় কিভাবে পার হচ্ছে,বুঝতেই পারছি না।
যাকে বলে সময়ের সদ্ব্যবহার ।
আমার একটা পুরনো হারমোনিয়াম আছে।কিন্তু দেখতে এখনো নতুনের মত।
জীবনের প্রথম টিউশনির টাকা জমিয়ে,অনেক শখ করে ১৯৯৪ সালে,সেই হারমোনিয়াম টা কিনেছিলাম ।
আমার অনেক বড় একটা স্মৃতি আর সম্পদ সেই হারমোনিয়াম।
আমার ছেলে শুদ্ধ, প্রথম ঐ হারমোনিয়াম দিয়েই সুনীল স্যারের কাছে গান শেখা শুরু করে।
কয়েক বছর পর শুদ্ধ’র এক জন্মদিন উপলক্ষে আমি এই ছবির স্কেল চেঞ্জার হারমোনিয়ামটা কিনে দেই।
এটা বাজিয়েও বেশ আরাম।
যেহেতু এই হারমোনিয়ামের দাম একটু বেশী,তাই শুধু সুনীল স্যার যেদিন গান শেখাতে আসেন,সেদিনই এটা ব্যবহার করা হয়।
বাকী দিন গুলো শুদ্ধ আমার পুরনো হারমোনিয়াম দিয়ে প্র্যাকটিস করে।
যদিও আমার কাছে এখনো পুরনো হারমোনিয়ামটাই বেশী আবেগের।
ছবিতে যে কাঠের সোফার অংশ বিশেষ দেখা যাচ্ছে,অনেক বছর আগে,মিরপুর থেকে আমার বন্ধু শাহনাজ খুশী পছন্দ করে সোফাটা কিনে দিয়েছিল।
ভুল বুঝবেন না,দাম টা আমি দিয়েছিলাম,পছন্দটা ছিল ওর।
যে টেলিভিশন আর শো কেস দেখতে পাচ্ছেন, ওগুলোর বয়স শুদ্ধ’র চেয়ে কম।
আমার লেখালেখির কোন টেবিল নেই।
শুদ্ধ’র আছে।
তাই আমি একটা টুলের ওপর বক্স হারমোনিয়াম রেখে,ল্যাপটপ স্ট্যান্ড সেট করে কাজ চালানোর জন্য ইম্প্রোভাইজ টেবিল বানিয়েছি।
সোজা হয়ে না বসে দীর্ঘক্ষন কাজ করলে পিঠ ব্যাথা হয়,তাই এই আয়োজন।
এবার চেয়ারের ইতিহাস টা বলি।
কয়েক বছর আগে,এই একই রকম দুইটা আরাম চেয়ার কিনেছিলাম।
একটা আমার জন্য,আরেকটা বৃন্দাবন দার জন্য।উনি বসে বসে এত ভালো নাটক লেখেন,সেই নাটকে আমি অভিনয় করি,
সেই ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা থেকেই ওনাকে চেয়ার টা দিয়েছিলাম।
উনি চেয়ারটার সঠিক ব্যবহার করেছেন,
কিন্তু আমি পারিনি।
গত কয়েক বছরে আমার তো আরাম চেয়ারে বসার সুযোগই তেমন হয়নি।
বৃন্দাবন দার চেয়ারটা এখনো সুস্থ্য আছে।
কিন্তু কয়েক বছর আগে আমার চেয়ারটা,
কোন এক কারনে পা ভেঙ্গে বারান্দায় কোমায় চলে যায়।
দীর্ঘদিন চেয়ারটা ধূলো ময়লার মধ্যে বারান্দাতেই পড়েছিল।
অনেক দিন ভেবেছিলাম,
ওকে চির বিদায় করে দেই।
কিন্তু কেমন যেন মায়া লাগতো।
শেষমেশ কয়েক মাস আগে,
পায়ের চিকিৎসা করিয়ে চেয়ারটাকে সুস্থ করে,বারান্দা থেকে আবার ঘরে নিয়ে এসেছি।
এখন নিয়মিত আরাম করে এই চেয়ারে বসে কাজ করি।
চেয়ারটার আবার নতুন জীবন শুরু হয়েছে।
হায় রে জীবন!!!নতুন জীবন!!!
আমরা কি আবার নতুন জীবন পাবো???
কেউ জানি না....
এই ছবিতে,টেলিভিশনের উপর দিকে,
এক কোনায় আমার মায়ের একটা ছবি দেখতে পাচ্ছেন।
হ্যা,আমার জন্মদাত্রী মা।
ইদানিং মা বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করে।
এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের জন্য খুব বেশী দুশ্চিন্তা হয়।
আমার বাবা মা এই করোনা কালে গ্রামের বাড়ীতে বন্দী।
এখন এরকম অনেকেরই, আপনজন অনেক দুরে।
কবে যে আবার প্রাণের মানুষগুলো এক হবো!
আমরা কেউ জানি না।
সকল মা বাবা ভালো থাক...
সকল সন্তান ভালো থাক...
আমরা সবাই যেন
আবার নতুন জীবন ফিরে পাই।
নতুন জীবনের আশায়,
ঘরে থাকুন,
নিরাপদে থাকুন....

কোন মন্তব্য নেই