একটা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের স্লিপ ছিড়ে আমার মিডিয়ায় যাত্রা শুরু~কিঙ্কর আহ্সান-।
একটা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের স্লিপ ছিড়ে আমার মিডিয়ায় যাত্রা শুরু।
পার্বণ ডেস্কঃ
বাসায় কেউ জানত না। সারাদিন খাম ছিড়ে স্লিপ গুনে দুপুরের খাবার পেতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্র লেখক হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিনের পর দিন এই কাজ করেছে। দেশের বড় বড় সেলিব্রেটিদের বাসায় কার্ড দিয়ে আসতে হত। বাবা স্কুলে থাকতে টিফিন দিত তিন টাকা আর কলেজে এসে দশ। নিজে যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন সেখানে ছেলেও পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে এই আনন্দে হাতখরচ এক লাফে বেড়ে দাড়াল সপ্তাহে দুই হাজার। বাসে উঠতে পারতাম না (এটা গর্ব না। এখন বাসে যাতায়াত করতে পারি)। নিজের গাটের পয়সা খরচ করে সিএনজিতে যেতাম এক একজন সেলিব্রেটিদের বাড়ি। কত অপমানিত হয়েছি। বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছে বড় মানুষগুলো। নামের শেষে খান থাকা এক জনপ্রিয় গায়কতো যেতে সামান্য দেরি হয়েছিল বলে করেছে কঠিন অপমান। আমি হতাশ হয়েছি। স্বপ্নের মানুষগুলো এমন হয় ভেবে অবাক হয়েছি। সে হতাশা কাটতে সময় লাগেনি। বুঝেছি সত্যিকারের স্বপ্নের মানুষগুলো ফুরিয়ে যায়নি এখনও। সারাদিন না খেয়ে, ছোটাছুটি করে দুপুরের দিকে একদিন গিয়েছিলাম রাইসুল ইসলাম আসাদের বাড়ি। ফাস্ট ইয়ারে পড়ি তখন। একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে দেখা করতে এলেন তিনি। দেখে বিভ্রান্ত হয়েছি। এতবড় একজন মানুষের বেশভূষা এত সাধারন কেন? নতুন কত সেলিব্রেটিদের দেখলাম ঘরের ভেতর কোট টাই পড়ে বসে থাকে! তিনি এসেই কার্ডটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘ঘেমে নেয়ে একাকার তো তুমি বাবা। এক গ্লাস শরবত গুলে দেই।’ আমার বড় অল্পতেই চোঁখ ভিজে যায়। ভিজেছিল সেদিন। এমন মানুষের সংখ্যা নগন্য! তাইতো কোন কোনদিন একটা লেখা ছাপানোর সুযোগ পাব বলে কুলির মতন কবি, লেখকদের ব্যাগ টেনেছি। বাসায় বাসায় গিয়ে এক লেখকের বিয়ের কার্ড বিলি করেছি। সে সবজায়গায় বলে পাঠাত পিওন পাঠাচ্ছি। যাদের বাড়িতেই যেতাম দরজা একটুখানি খুলে তারা ভিজিটিং কার্ড নিত। তারপর দরজা আটকে দিত। ভেতরে কিছুক্ষন ফোনে কথা বলে তারপর দরজা আবার খুলে বলত, ‘যাও। সব ঠিক আছে।’ সে কি অপমান হত আমার! রাগ হত। চিৎকার করে, রাগ করে বলতে ইচ্ছে করত, ‘দশ-বারোটা রাঘব বোয়াল আমার ফ্যামিলি পোষে। আমার ড্রইং রুমের টিভিটার দাম যত তোর পুরো ঘরের আসবাবপত্রের দাম ততনা।’ বলিনি। এসব অতি ঠুনকো জিনিষ। পণ করেছিলাম নিজের চেষ্টায় বড় হব। কোনদিন নিজের কোন কাজে পরিবারের সাহায্য নেবনা। নেইওনি। সবাই খারাপ না। কেউ কেউ সন্মান দিতে জানে। তাইতো হুমায়ূন ফরিদীর মতন মানুষ না চিনে, না জেনে একটা বাচ্চা ছেলের সাথে কাজ করতে রাজি হয়ে যায়। নতুনদের মাঝে শতাব্দী ওয়াদুদ তার বিনয়ী আচরন দিয়ে মুগ্ধ করে। সেই ছোট আমি একটু একটু করে এগিয়েছি। পথ চলা শুরু করেছি। লেখক হতে চাই আর কিছু না। প্রার্থনা করি, কোনদিন যেন অহংকার এসে আমাকে ছুতে না পারে। কষ্ট দিক, ঠকাক, বিশ্বাস ভঙ্গ করুক তবুও যেন কারও সাথে প্রতারনা না করি। মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেও শান্তি। অফিসের এক বড় ভাই কিছুদিন আগে বলেছিল, ‘কিঙ্কর তুই মরবি। বিনয় তোকে খাবে বুঝলি। ছাড়ান দে।’ বলেছি, ‘ভাইয়া, কথাটা মানতে পারলাম না। অল্প কিছু মানুষ খারাপ। সবাই না। বিনয়ের জন্যে ঠকেছি সে কথা মিথ্যা না। কিন্তুু বিনয়ের কারনেই কত বড় ভাই - বোন, ছোট ভাই - বোনের ভালোবাসা পেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। আপনিও তো এই ছোট ভাইটাকে ভালোবাসেন তাই না?’ তিনি কিছুক্ষন চুপ করে ছিলেন। তারপর বললেন, ‘তোর লেখক হবার স্বপ্ন যাতে সত্যি হয় তার জন্য মন থেকে দোয়া করব। যা।’ এইতো। এতটুকুনই চাই আমার। ভালোবাসা। আর কিছু না। জানিনা স্বপ্ন পূরন হবে কিনা। তবে ছুটতে দোষ কি! কত মানুষ কত ছোট খাট কাজ করেই না নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়েছে। সে তুলনায় তো আমি অনেক ভাগ্যবান। চাকরিতে ভালো বেতন পাই। পরিবার থেকে পাই হাতখরচ। ঝামেলা নেই কোন। আমি শুধু লিখতে চাই। লিখে পৌঁছাতে চাই মানুষের কাছে। লেখালেখির কারনে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অবহেলা নিয়েও লড়াই করেছি, করছি। ঘৃণা পাঁচজন করলে পাঁচ হাজার মানুষ পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে ভালোবাসা নিয়ে। এইতো সাহস। এই সাহস, আশা নিয়েই পৃথিবীটাকে বইয়ের করতে চাই। এক জীবনে যে কয়টা খারাপ মানুষ দেখেছি তার চেয়েও হাজার বেশি দেখেছি ভালো মানুষ। তাই আশা হারাই না। ছোটাছুটির জীবন, ক্লান্ত জীবন, বিষাদের জীবন নিয়েও কেমন আছি জানতে চান? সুখে আছি। বেশ সুখে। জীবনে সততা আর মানুষের ভালোবাসা থাকলে আর কিছুর প্রয়োজন নেই। সত্যিই প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করুন। কসম।
~কিঙ্কর আহ্সান
কোন মন্তব্য নেই