হোম কোয়ারেন্টাইনকে আনন্দময় করুন.......।।


।। হোম কোয়ারেন্টাইনকে আনন্দময় করুন.......।।



Image may contain: 1 person, beard and closeup



পেশাগত জীবনে একজন প্রিভেনটিভ মেডিসিন/পাবলিক হেলথ কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনাদের সবিনয়ে জানাতে চাই, সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের জনসচেতনতা এখনও পর্যাপ্ত নয়। এমনিতেই আমাদের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ, শিক্ষিতের হার বেশ কম, সামাজিক ও সামগ্রিক সচেতনতার মাত্রা ও উদ্যোগ মোটেই আশাপ্রদ নয়, আমাদের স্বাস্হ্য ব্যবস্হার অসংখ্য জায়গায় ক্রুটি আছে, আছে আরো অনেক সীমাবদ্ধতা— সব মিলিয়ে বাস্তবতা হলো, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই আমাদেরকে অনেক অনেক বেশী প্রো-একটিভ ও সচেতন হতে হবে... অবহেলা করা যাবে না স্বাস্হ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত প্রাত্যহিক নিয়ম-নীতি বা স্বাস্হ্যবিধিতে। আপনি আক্রান্ত হোন বা আক্রান্ত হবার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকুন বা সন্দেহভাজন জীবানু বহনকারী হোন বা আপাত সুস্হ মানুষ হোন — প্রত্যেকেরই সামগ্রিক অর্থে সচেতন হওয়া একান্ত জরুরী। অনেক রোগের ক্ষেত্রে আমাদের জনপ্রিয় শ্লোগান ছিলো -‘বাঁচতে হলে জানতে হবে।’ করোনা’র ক্ষেত্রে শুধু জানলেই হবে না, জানাটাকে কাজে পরিনত করতে হবে অতিদ্রুত । সচেতন হতে হবে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধরের জন্য। সময় দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২ মাস সময় পেয়েও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে ও ঠিক সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সামগ্রিক অর্থে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা বেশ ক’টি দেশের সিদ্ধান্তহীনতার পরিনতি থেকে আমরা শিক্ষা নেইনি মোটেই। যতদূর সম্ভব নিজেকে বাড়ি/ঘরের মাঝেই রাখুন, ঘরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও করোনা ভাইরাসের জীবানু সংক্রমনের পদ্ধতি নিয়ে, ভাইরাসটির বিশ্বব্যাপি সংক্রমন ও ভয়াবহতা নিয়ে পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করুন। ড্রাইভার-কাজের বুয়াকেও আলোচনায় রাখুন বা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিন, বাড়ির ৫ বছরের ছোট্ট শিশুটিও যেন বুঝতে পারে ওঁর কি করনীয়... তবে শুধুমাত্র নিজের বা পরিবারের কথা ভাবলেই চলবে না— আমাদের এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি- আমাদের আত্মীয় স্বজন-বন্ধুবান্ধব-পাড়া প্রতিবেশী-শুভাকাঙ্খীদের টেলিফোনে খোঁজ-খবর নেয়া, তাঁদের সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করা, তাঁদের মনোবল বাড়াতে সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ঘরের বাইরে যেহেতু খুব বেশী প্রয়োজন ছাড়া যাবেন না — তাই বেশ কিছুটা সময় পাবেন পরিবারের সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটাবার আর সেই সাথে আপনার জীবনে যাঁরা কোন না কোনভাবে ভূমিকা রেখেছেন-রাখছেন বা ভবিষ্যতে রাখবেন -তাঁদের সাথে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ গড়ে তুলে তাঁদেরকে আশ্বস্ত করা, অনুপ্রানিত করা -তাঁরাও যেন ঠিক একই কাজটি করেন। ডাক্তারের পরামর্শে বা আপনি নিজেই নিজের সিদ্ধান্তে পূর্ন বা আংশিক হোম কোয়ারেন্টাইন (বিছিন্ন) এ থাকছেন/মনস্হির করেছেন — এই সময়টুকু আনন্দের মাঝেই থাকুন— পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কক্ষে থাকুন, বই পড়ুন, গান-কবিতা শুনুন, জোকস পড়ুন , টেলিভিশন দেখুন, পর্যাপ্ত রেষ্ট নিন, লেখালেখি/ছবি আঁকাবার অভ্যাস থাকলে চর্চা করুন, পর্যাপ্ত পানি ও ফলের রস গ্রহন করুন, নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বাস্হ্যসম্মত খাবার গ্রহন করুন, স্বাস্হ্যবিধি অনুযায়ী করনীয় প্রতিটি প্রাত্যহিক কাজ সময়মত করুন, মেডিটেশন করুন, নামাজ পরুন, মহান আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার কাছে সবাই সবার জন্য দোয়া করুন — পুরো প্রক্রিয়াটি আনন্দের মাঝে সম্পন্ন হলে আপনার জীবনীশক্তি অনেক অনেকগুন বেড়ে যাবে, শরীর ও মন চাঙ্গা হবে পর্যাপ্ত রেষ্ট পেয়ে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ হবে, বাড়বে আন্তরিকতা। সর্বোপরি আমরা সবাই মনে রাখবো— “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।” সচেতনতা, আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হবার চেইনকে ভেঙে দিতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। আপনার-আমার নেয়া এক একটি ছোট্ট স্টেপ সম্মিলিতভাবে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে এই জাতীয় জনদূর্যোগ মোকাবিলায়। আমরা সবাই ভালো থাকি, সুস্হ থাকি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুন।

ডা. অনুপম হোসেন কনসালটেন্ট প্রিভেনটিভ মেডিসিন/ পাবলিক হেলথ কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ। প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন, জেড এইচ শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ।

কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.